আবাসন সংকট মোকাবেলায় বিদেশিদের ওপর ১০০ শতাংশ ‘হাউজ ট্যাক্স’ আরোপের পরিকল্পনা করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
গত সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিদেশিদের কেনা বাড়ির মূল্যের ওপর ১০০ শতাংশ কর আরোপসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কাউকে স্পেনে বাড়ি কেনা নিরুৎসাহিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান দেশটির সমাজতান্ত্রিক এ প্রধানমন্ত্রী।
সানচেজ বলেন, “স্পেনের আবাসন স্প্যানিশদের বসবাসের জন্য হওয়া উচিত; সেইসঙ্গে সেইসব অভিবাসীদের যারা এখানে কাজ করতে এসে আমাদের দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।”
যারা আবাসনকে বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে তাদের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন তিনি।
আবাসন সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে বার্সেলোনা ও সেভাইলের মতো আরও কয়েকটি শহরে পর্যটকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। বিদেশি ক্রেতা ও পর্যটকদের ভিড়কে এ সংকটের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্পেনে বাসস্থান সংকট কতটা গুরুতর এবং নতুন উদ্যোগগুলো কি সেই সমস্যা সমাধান করতে পারবে যা আগের সরকারগুলো সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে?
নতুন কর পরিকল্পনা কী?
গত বছর ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির পর আবাসন বাজারের সংকট কাটাতে ১২টি পদক্ষেপ প্রস্তাব করেছেন সানচেজ।
স্পেনের রেজিস্ট্রার অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ২৭ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট কেনে। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে রিয়েল এস্টেটের প্রায় ১৫ শতাংশ সম্পত্তি বিদেশিরা কেনে। আরোপিত শতভাগ কর এসব ক্রেতাদেরই ওপরই আরোপিত হবে।
সোমবার মাদ্রিদে ‘হাউজিং দ্য ফিফথ পিলার অফ দ্য ওয়েল ফেয়ার স্টেট’ ফোরামে সানচেজ বলেন, বিদেশিরা থাকার জন্য নয় অর্থ উপার্জনের জন্য কিনে থাকে। এই সংকটদের সময় আমরা এর জোগান দিতে পারছি না।”
এসব অ্যাপার্টমেন্ট ছুটির সময় ‘ব্যবসার মতো’ ভাড়া দেওয়ায় এর ওপরও উচ্চ কর প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা ট্যুরিস্টদের কাছে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিলেও তারা হোটেলের চেয়ে কম কর দেয় বলে জানান সানচেজ।
এছাড়া বাড়িওয়ালাদের জন্য কর ছাড় ও প্রণোদনারও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তরুণদের সাশ্রয়ী আবাসন সরবরাহ এবং উচ্চ-চাহিদাসম্পন্ন এলাকায় ভাড়া সীমিত করার প্রস্তাবও রয়েছে।
কী ধরনের প্রভাব ফেলবে?
শতভাগ কর সেই ব্যক্তিদের উপর প্রযোজ্য হবে যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক বা বাসিন্দা নন। আর যাদের বাড়িগুলো হলিডে হোম বা বিনিয়োগের বাড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
স্পেনে বিদেশি মালিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন যুক্তরাজ্যের। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী এ ধরনের বাড়ির মোট ১০ শতাংশের মালিক তারা।
আবাসন সংকট এবং উচ্চ ভাড়ার কারণে ২০১২ সাল থেকে গৃহহীনতার হার ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৮ হাজারে পৌঁছেছে বলে সরকারি এক পরিসংখ্যান জানিয়েছে।
নতুন পদক্ষেপগুলো স্থানীয়দের সহায়তার জন্য নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শহর এবং ব্যালেয়ারিক দ্বীপপুঞ্জ ও ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের মতো উপকূলীয় এলাকা যেখানে উচ্চ চাহিদা এবং সীমিত সরবরাহের কারণে ভাড়া বেড়ে গেছে।
কবে কার্যকর হবে?
বিদেশি ক্রেতাদের ওপর কর আরোপসহ প্রস্তাবিত অন্যান্য পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কোনো দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি।
বাস্তবায়নের আগে প্রস্তাবগুলো স্পেনের বিভক্ত সংসদে অনুমোদিত হতে হবে। যেখানে সানচেজের সংখ্যালঘু জোট আইন প্রণয়নে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।