শুক্রবারের পত্রিকা : ‘সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জে এনসিপি’

Newspaper_07022025 (5)

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ বা শুল্ক বাড়ানোর খবরটিই শুক্রবার গুরুত্ব পেয়েছে প্রায় সংবাদপত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়েই এদিন প্রধান প্রতিবেদন সাজিয়েছে পত্রিকাগুলো। এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টার থাইল্যান্ড সফর এবং ব্যাংককে বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরামে তার অংশগ্রহণের খবরও গুরুত্ব পেয়েছে সংবাদপত্রগুলোতে। এর বাইরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খবরও ছাপা হয়েছে গুরুত্ব সহকারে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শুক্রবার কোন সংবাদপত্র কোন খবরকে প্রধান শিরোনাম করেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের খবর এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে তার বিশ্লেষণ দিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। ‘মহাবিপদে রপ্তানি খাত’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এতদিন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র এবং দীর্ঘদিন ধরে দেশটির বাজারে তৃতীয় পোশাক রপ্তানিকারক। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা, বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৪টায় হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন করে শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যার ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। এ ছাড়াও জুতা, টেক্সটাইলসামগ্রী ও কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে ২০২৪ সালে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে। এর মধ্যে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতি বর্গমিটার পোশাকের দাম ছিল ৩ দশমিক ১০ ডলার। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। তুলা ছাড়াও অন্যান্য কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, গম এবং ভুট্টা, যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।

‘সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জে এনসিপি’ শিরোনামের পত্রিকাটির দ্বিতীয় প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর বয়স এক মাস পেরিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশের পরদিন শুরু হয় মাহে রমজান। রমজানকেন্দ্রিক দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমের দিকে মনোযোগ দিতে পারেননি দলটির নেতারা। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনীতির মাঠে পা রাখা দলটির সামনে এখন নানামুখী চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করা।

দলীয় সূত্র জানান, ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে নতুন উদ্যমে দল গুছিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নেবেন এনসিপির নেতারা। প্রাথমিক কার্যতালিকায় থাকবে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর নিবন্ধন পেতে যাবতীয় শর্ত পূরণ করা। শুরু হবে গঠনতন্ত্র লেখার কাজ। চূড়ান্ত করা হবে দলের মূলনীতি, স্লোগান। আসন্ন নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা কোন প্রতীকে লড়বেন তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত এনসিপির কার্যালয়কে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে। ঈদের পর শুরু হবে স্থায়ী কার্যালয়ের খোঁজ।

সমকাল

আমদানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের খবর এবং দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে সমকাল। ‘মার্কিন শুল্কে রপ্তানি খাতে উদ্বেগ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর বড় অঙ্কের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন দেশ একে বাণিজ্যযুদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বাংলাদেশ যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিল, তখন ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘটনা ঘটল। আগে ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ তার প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছে। কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে যেসব কারখানা বছরের পর বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই রপ্তানি করে থাকে, তারা বড় সংকটের আশঙ্কা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার পণ্য আমদানির উৎস দেশগুলোর বেশির ভাগের ওপর নতুন করে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এ হার এত দিন পর্যন্ত আরোপিত শুল্কহারের অতিরিক্ত বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে এর সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করে প্রধান প্রতিবেদন করেছে প্রথম আলো। ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে পণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কার শঙ্কা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সূচকের পতন ঘটেছে বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারে। সোনার দামেও নতুন রেকর্ড হয়েছে। কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। মোদ্দাকথা, ট্রাম্পের এই পাল্টা শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের গতি–প্রকৃতি অনেকটাই বদলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণা নিয়ে বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশ্বনেতাদের ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বন্ধুসুলভ নয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নিঃসন্দেহে এই ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাব অনুভূত হবে। চীন বলেছে, তারা এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিলেন।

কালের কণ্ঠ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের খবর এবং এর প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ঘিরে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে কালের কণ্ঠ। ‘শুল্কের অস্ত্রে রপ্তানি বিপদে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এত দিন গড়ে এই হার ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন করে এই শুল্ক আরোপের ফলে দেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বুধবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্কহার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের। তাই দেশটির ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকদের। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশের উচিত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়া বা শুল্ক কমিয়ে দেওয়া।

ইত্তেফাক

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের পোশাক খাতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে ইত্তেফাক। ‘যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে শঙ্কা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পালটা শুল্কের যে ঘোষণা দিলেন, তাতে রীতিমতো ঝড় বয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এর প্রভাব শুধু বড় অর্থনীতির দেশগুলোতেই নয়, উন্নয়নশীল এমনকি ছোট অর্থনীতির দেশগুলোও পড়েছে। সবাই এখন হিসাব কষছে, এর প্রভাব কতটা পড়বে দেশগুলোতে। বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা এসেছে, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের মুখোমুখি হবে। এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ, যা এখন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেল।

যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে, তার মধ্যে রয়েছে—স্ক্র্যাপ আয়রন, পেট্রোলিয়াম ও কটন বা তুলা। এছাড়া কৃষিপণ্য, যেমন—খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা আমদানি করে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বছরে আড়াই বিলিয়ন ডলারের কম পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অন্যদিকে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের (৮.৪ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাকের পারিমাণ ৭৩৪ কোটি ডলার। নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুগান্তর

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে যুগান্তর।রপ্তানি খাতের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতিশিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আমাদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার মধ্যরাতে নতুন রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ নীতির অংশ হিসাবে শুল্ক বৃদ্ধির এ ঘোষণা দেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ ডলার মূল্যের একটি টি-শার্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের শুল্ক (১৫ শতাংশ হারে) গুনতে হতো দেড় ডলার। এখন ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে একই টি-শার্টে ৩ দশমিক ৭ ডলার শুল্ক গুনতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সেই টি-শার্টের দাম পড়বে ১৩ দশমিক ৭ ডলার। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রেতার চাহিদা কমে বাজার সংকুচিত হতে পারে। যার প্রভাবে দেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

বণিক বার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বিশেষ করে পোশাক ও জুতা শিল্পে এর সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করে প্রধান প্রতিবেদন করেছে বণিক বার্তা।  ‘রফতানিতে উচ্চশুল্কের মুখোমুখি হতে হবে পোশাক জুতাসহ অনেক পণ্যকে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপের হার ৩৭ শতাংশ, যার আওতায় রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতাসহ আরো অনেক পণ্য। দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রফতানি অর্থমূল্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। ফলে এ পণ্যটির ওপরই নতুন শুল্কের বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা। এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শুরু করে একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানিতে যে দেশ যতটা শুল্ক আরোপ করে থাকে, সেই দেশের পণ্যে উপযুক্ত হারে রেসিপ্রোকাল বা পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলে আসছিলেন ট্রাম্প। ২ এপ্রিল ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ট্রাম্প। দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

আজকের পত্রিকা

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের পোশাক খাতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে আজকের পত্রিকা। ‘ট্রাম্পের শুল্কে পোশাক খাতে শঙ্কা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার এক ঘোষণায় বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের এ তালিকায় বাদ পড়েনি বাংলাদেশের নামও। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হয়েছে। এত দিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। এখন তা বেড়ে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানোর এ পদক্ষেপকে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি ‘সর্বজনীন শুল্কনীতি’ বলা হলেও এ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের মধ্যে।

বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পের ওপর সরাসরি বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি সামগ্রিক অর্থনীতিকেই বয়ে বেড়াতে হবে। এতে ছেদ ঘটতে পারে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির গতিশীলতায়।

নয়া দিগন্ত

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে নয়া দিগন্ত। ‘মার্কিন বাজারে ৩৭ শতাংশ শুল্ক’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অদ্ভুত ফর্মুলা অনুসরণ করে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন। ট্রাম্পের নতুন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল। এতে রফতানিকারকদের কপালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের রফতানি, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে সে দেশে আরোপিত শুল্কের অর্ধেক হারে শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে শুল্কের এই হিসাব করা হয়েছে অদ্ভুত এক ফর্মুলায়। তবে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেছেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুত শুল্ক যুক্তিসঙ্গত করার বিকল্পগুলো চিহ্নিত করছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে।

দেশ রূপান্তর

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তৃতা করার খবর দিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে দেশ রূপান্তর। ‘তরুণরা উদ্যোক্তা হলেই উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণদের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তরুণদের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই কেবল টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।’

গতকাল বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক ইয়ং জেনারেশন ফোরামে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন। ড. ইউনূস অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার ছিলেন। এ প্রজন্মের তরুণরা পৃথিবীর যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী প্রজন্ম অভিহিত করে অধ্যাপক ইউনূস তাদের শুরুতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা চালু করার পরামর্শ দেন।

এ সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তুমি একবারে রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। তাই ছোট পরিসরে শুরু করে পরিবর্তনের সূচনা করো।’ তরুণদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘শুরুতে বড় পরিসরে ব্যবসা চালু করা ভুল পথ।’ তিনি সবার জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তরুণদের সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন