ভারতের লক্ষ্যবস্তু তালিকায় ভাওয়ালপুর থেকে কোটলি: কী বলছে বিশ্লেষণ?

অভিযানের জন্য নির্বাচিত নয়টি স্থানের প্রতিটিরই বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার ইতিহাস ছিল।
অভিযানের জন্য নির্বাচিত নয়টি স্থানের প্রতিটিরই বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার ইতিহাস ছিল।

বুধবার ভোরে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে যে অভিযান চালিয়েছে তাতে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) জুড়ে নয়টি স্থানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। কিন্তু কী কারণে ওই স্থানগুলোকেই বেছে নিল ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

ভারতের এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকেই ভারত লক্ষ্যবস্তু হিসাবে চিহ্নিত করে হামলা চালিয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগ ছিলেন পর্যটক।

পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) গোষ্ঠীকে এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে ভারত দাবি করে আসছে। ভারতের হামলায় এলইটি, জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম), হিজবুল মুজাহিদিন এবং অন্যান্য সহযোগী নেটওয়ার্কের মূল লজিস্টিক, অপারেশনাল এবং প্রশিক্ষণ অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য ছক সাজানো হয়েছিল।

কেন এই লক্ষ্যবস্তুগুলো?

অভিযানের জন্য নির্বাচিত নয়টি স্থানের প্রতিটিরই ভারতে পরিচালিত বড় সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্র এবং অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত ইতিহাস রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এমন প্রমাণের ভিত্তিতে ভারত ওই স্থানগুলো চিহ্নিত করে।

ভাওয়ালপুর: জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর

পাকিস্তানের দক্ষিণ পাঞ্জাবের ভাওয়ালপুর ছিল অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। শহরটি মাসুদ আজহারের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই গোষ্ঠীটি ২০০১ সালে সংসদে হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ ভারতে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল হামলার দায় স্বীকার করেছে বা এর সাথে যুক্ত রয়েছে।

মুরিদকে: লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি

লাহোর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে, মুরিদকে হলো লস্কর-ই-তৈয়বা এবং এর দাতব্য শাখা, জামাত-উদ-দাওয়ার ঘাঁটি। ২০০ একরেরও বেশি জমি জুড়ে বিস্তৃত, মুরিদকেতে প্রশিক্ষণ এলাকা, শিক্ষা কেন্দ্র এবং লজিস্টিক সহায়তা অবকাঠামো রয়েছে।

ভারত অভিযোগ করে আসছে যে, লস্কর-ই-তৈয়বা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরিকল্পনা করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে ২৬/১১ হামলাকারীরা এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।

কোটলি: বোমারু প্রশিক্ষণ এবং সন্ত্রাসী ঘাঁটি

পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলিকে ভারত বারবার আত্মঘাতী বোমারু এবং বিদ্রোহীদের জন্য একটি প্রধান প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করে আসছে। সূত্র অনুসারে, কোটলি স্থাপনায় যেকোনো সময় ৫০ জনেরও বেশি প্রশিক্ষণার্থী থাকার ক্ষমতা রয়েছে।

গুলপুর: রাজৌরি এবং পুঞ্চে হামলার জন্য লঞ্চপ্যাড

গুলপুরকে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি এবং পুঞ্চে অভিযানের জন্য ফরোয়ার্ড লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। সূত্রের খবর, এই স্থানটি সন্ত্রাসীদের জন্য একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো যারা ওই অঞ্চলে ভারতীয় নিরাপত্তা কনভয় এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালাত।

সাওয়াই এলইটি ক্যাম্প

সাওয়াই উত্তর কাশ্মীরের, বিশেষ করে সোনমার্গ, গুলমার্গ এবং পেহেহেলগামে হামলার সঙ্গে যুক্ত বলে ভারতের ধারণা।

সরজাল এবং বার্নালা: অনুপ্রবেশ রুট

আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে অবস্থিত, সরজাল এবং বার্নালাকে অনুপ্রবেশের প্রবেশদ্বার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

মেহমুনা: হিজবুল মুজাহিদিনের উপস্থিতি

শিয়ালকোটের কাছে অবস্থিত মেহমুনা ক্যাম্পটি হিজবুল মুজাহিদিনরা ব্যবহার করে আসছে বলে ভারতের অভিযোগ।যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই গোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

বুধবার রাত ১.৪৪ মিনিটে, ভারত দূরপাল্লার স্ট্যান্ডঅফ অস্ত্র ব্যবহার করে নির্ভুল হামলা শুরু করে। এই হামলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী যৌথভাবে অংশ নেয়, যেটি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এ ধরনের ত্রি মাত্রিক অভিযান ছিল। ভারত এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, কোনও পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।

অভিযানের পর ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছে।

এনডিটিভি সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছে, ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অভিযানের বিষয়টি অবহিত করেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads