চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথে ‘চিড়ে চ্যাপ্টা’ বিশ্ব অর্থনীতি! একপক্ষ বর্ধিত শুল্ক আরোপ করছে তো পাল্টা শুল্ক বসিয়ে কড়া জবাব দিয়ে যাচ্ছে অপরপক্ষ। এ যেন দুই পরাশক্তির বাণিজ্য যুদ্ধের নির্মোহ ‘খেলা’।
চলতি মাসের ২ এপ্রিল থেকে একের পর এক দেশের ওপর পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলছিলেন তখন সারাবিশ্ব যেন আমেরিকার কাছে আত্মসমর্পণের প্রহর গুণছিল। শুধু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে চীনের তরফে।
সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাল্টা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিল চীন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান’ মানুষের সঙ্গে তুলনার পাশাপাশি যে বিষয়টি উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন তা হলো তার ‘সাহসী পদক্ষেপ’।
চীনের অর্থমন্ত্রী শুক্রবার নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন শনিবার থেকেই এ শুল্ক কার্যকর হবে।
এর আগে গত বুধবার মার্কিন পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল চীন।
অবশ্য এ যাত্রায় বেইজিং জানিয়ে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত আর কোনো শুল্কের জবাব দেবে না।
পাশাপাশি দেশটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ‘অস্বাভাবিক উচ্চ শুল্ক’ আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক বাণিজ্যনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ বিচার-বিবেচনার গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। এটি সম্পূর্ণরূপে একতরফা মাস্তানি ও জবরদস্তি।
এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন মাসের জন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সেই তালিকায় নেই চীনের নাম, দেশটির ওপর উচ্চ শুল্কহার বহাল রেখেছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় সব চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেছেন, কী হবে, সেটি ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।
তবে এ-ও ঠিক, ট্রাম্প নানাভাবে চীনকে বোঝাতে চাইছেন শুল্ক আরোপ করে তিনি মূলত চীনকে আলোচনার টেবিলে বসাতে চান। শুধু চীন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ যদি চুক্তি না করে, তাহলে ৯০ দিন পর পাল্টা শুল্ক ফিরিয়ে আনার পথ তো খোলাই রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ভারসাম্যের যে হিসাব দিচ্ছে সে অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৫৮২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, চলমান শুল্কযুদ্ধের কারণে দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:
চীনের সাড়ার অপেক্ষায় ট্রাম্প, বললেন ‘শি বুদ্ধিমানদের একজন’