পিছু হটল সরকার, এনবিআরের আন্দোলন স্থগিত

NBR-Protest (1)

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণার পর এনবিআর বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটলো সরকার। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিকে এখন ‘স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েকদিনের নাটকীয়তার অবসান হলো, আন্দোলনও প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলনের মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানায় মন্ত্রণালয়টি।

এরপর রাত ৮টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ারও আহবান জানানো হয়েছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলেছে, “অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি থেকে স্পষ্ট যে, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না; বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করা হবে।

“রাজস্ব নীতি প্রণয়ণের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের আগ পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর হবে না।”

সরকারের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের এতদিনের দাবি ও কর্মসূচির যৌক্তিকতা দেশবাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

“এই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সোমবার থেকে ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হল।”

গত ১২ মে রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাগ করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

পরদিন থেকে তা বাতিলের দাবিতে অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা।

তাদের আন্দোলনের মুখে অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বলছে, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।

সেজন্য ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ওই অধ্যাদেশে সংশোধন করা হবে। এনবিআর, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি এবং ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রেসনোটে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সরকার আশা করেছিল যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট সার্ভিসের সকল উদ্বেগের অবসান ঘটবে। কিন্তু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক প্রেস রিলিজে মনে হচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।

সে কারণে সরকারের অবস্থান আরো স্পষ্ট করতে তিন পয়েন্টে একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে, বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালী করা এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতির আলাদা কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম পৃথককরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। সংশোধনের আগ পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না।”

মূলত চারটি দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল। এরমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার দাবিটি ছাড়া বাকি তিনটি পূরণ হওয়ায় কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে পরিষদ।

সে কারণে এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে ‘অসহযোগ কর্মসূচি’ চলবে বলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

কর্মবিরতিতে অচল এনবিআর

এনবিআর ‘শাটডাউন’, লাগাতার কর্মবিরতিতে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা

আরও পড়ুন