গ্রামীণ ব্যাংকে কমছে সরকারের অংশীদারিত্ব, ক্ষমতাও

Yunus Grameen Bank

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মালিকানা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পথে হাঁটছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদে সরকারের যে ক্ষমতা ছিল তাও ছেঁটে ফেলা হচ্ছে।

গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধনে প্রণীত খসড়ায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে খসড়াটি অংশীজনদের মতামত নেওয়ার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা হলেও অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ইউনূস।

অবশ্য ইউনূসকে নানা সময়ে বলতে শোনা গেছে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে আওয়ামী সরকার।

সেই ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারের আনুকূল্য পেতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।

সম্প্রতি নিউ এজ সম্পাদকের নেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও বিষয়টি উঠে আসে, ইউনূসকে মোকাবেলা করতে হয় সেই একই প্রশ্ন।

প্রতিষ্ঠানটিকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে আয়করমুক্ত সুবিধা, প্রত্যাহার হয়েছে ৬৬৬ কোটি টাকা আদায়ের কর ফাঁকির মামলা আদেশ।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকটিতে নতুন চেয়ারম্যানও নিয়োগ পেয়েছেন।

এর মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের প্রস্তাব, যাকে ২০১১ সালের আগের কাঠামোতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন আর্থিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।  

গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ মালিকানা সরকারের এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ঋণগ্রহীতাদের কাছে ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা থেকেই ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ সরকারের মনোনীত তিনজন পরিচালক এবং ঋণগ্রহীতাদের নির্বাচিত নয়জন পরিচালক ছিলেন।

তবে প্রস্তাব অনুযায়ী, বোর্ডে ১১ জন পরিচালক নির্বাচনের সুযোগ পাবেন ঋণগ্রহীতারা।

বর্তমান আইনে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও প্রস্তাবিত খসড়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচন বোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকেই করার বিধান রাখা হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবে চেয়ারম্যান অক্ষম হলে, বোর্ডের সদস্যরা অন্য কোনো পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন বলে বলা হয়েছে, যা এতদিন সরকারের হাতেই ছিল।

বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারতেন।  তবে প্রস্তাবিত খসড়ায় নতুন একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে—বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

খসড়াটি প্রণয়নের আগে বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের আইন উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এ পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকে সরকারের অংশীদারিত্ব এবং বোর্ডের প্রতিনিধিত্বকে ২০১১ সালের আগের কাঠামোতে ফিরিয়ে আনা।

আরও পড়ুন