ডালাসে প্রবাসী বাংলাদেশির ‘সবুজ বিলাস’

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আরিফুল ইসলামের সবুজপ্রেম।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আরিফুল ইসলামের সবুজপ্রেম।

দেশের বাইরে এলে দেশ নিয়ে যতোটা ভাবনা তৈরি হয়, দেশে থাকতে বোধকরি ততটা হয় না। এই যেমন প্রবাসী আরিফুল ইসলামের কথাই যদি বলি। ‘নাড়ি ছিড়ে’ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন দেড় দশক আগে। এরপর নানা প্রতিবন্ধকতা আর চড়াই উতরাইয়ের পর টেক্সাসে স্থিতু হয়েছেন। আর্থিক সচ্ছলতা পেতে নানা লড়াইয়ের পরও নিজের শখ-আহ্লাদ থেকে বিচ্যুত হননি। আমেরিকায় নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের সবজির খামার।

২০১০ সালে আরিফুল ইসলাম যখন দেশ ছাড়েন এরপর নিউ ইয়র্কে তার প্রবাস জীবনের শুরু। একই বছর টেক্সাসে চলে আসেন। বর্তমানে থাকছেন ডালাসের রিচার্ডসনে।

২ ছেলে, ১ মেয়ে ও তার স্ত্রীকে নিয়ে এখন ভালোই কাটছে তার প্রবাস জীবন।

দ্য সান ২৪– এর একজন প্রতিনিধি ডালাস গিয়ে আরিফুল ইসলামের খোঁজ পান, যিনি মার্কিন মুলুকে গড়ে তুলেছেন সম্পূর্ণ বাংলাদেশি আমেজের সবজির খামার। পরে তার সেই খামারে গিয়ে তুলে এনেছেন ‘এক টুকরো বাংলাদেশের চিত্র’।

আমাদের ওই প্রতিনিধি যখন তার বাসা ঘিরে থাকা খামারে যান তখনও তিনি সবজি বাগানেই সময় দিচ্ছিলেন।

আরিফুল ইসলামের এমন উদ্যোগ অনুপ্রাণিত করেছে অন্যান্যদেরও। ছবি: দ্য সান ২৪।

পরিচয় দিয়ে চাষাবাদের প্রতি তার আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইতেই নিঃসংকোচে বলতে লাগলেন দেশের প্রতি তার সুতীব্র টানের কথা।

“বিদেশে এসে বুঝতে পারলাম, দেশটাকে কতোটা ভালোবাসি। দেশের এক একটা সবজির নামও যে কতোটা প্রিয় হয়ে যেতে পারে, স্বাদ কতোটা অমৃত হতে পারে, তা এখানে আসার আগে এতটুকু বুঝিনি,” বলছিলেন আরিফুল।

আমাদের প্রতিনিধি ব্যক্তিগত বিষয় কিংবা রাজনৈতিক আলাপের চেয়ে বাতচিতকে সবজি বাগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তবে এতটুকু জেনেছেন, বিদেশ জীবনের শুরুটা অতোটা অনুকূলে ছিল না।

বাগান ঘুরে দেখা গেল হরেক রকমের বাংলাদেশি শাক-সবজির যেন জাদুঘর! কী নেই! পাট শাক, পুঁই শাক, কলমি শাক, ডাটা শাক, ভেটু শাক, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া, সীম, ঢেঁড়স, করলা, লাউ, শসা, বেগুন, পুদিনা, বরবটি, ধুন্দুল, মরিচ। এর বাইরেও দেখা হলে পার্সিমন ও পীচ।

পুরো বাড়ির চারপাশ ঘিরে রয়েছে তার নানারকম শাক-সবজির বাগান। ছবি: দ্য সান ২৪।

শুধু স্থানীয়রা নয়, অন্যান্য শহর থেকেও আরিফুলের এই সৌখিন বাগান দর্শনে ছুটে আসেন। অন্যদেরকেও নিয়মিত নানা পরামর্শ দিয়ে দেশি শাক-সবজি চাষে অনুপ্রাণিত করেন।

জানালেন, বাংলাদেশে থাকতে এই বাগানপ্রীতির কারণে মানুষজন তাকে ‘সবুজ সাথী’ বলে ডাকতো। নানা ধরনের সবজি উৎপাদনে তার আগ্রহ ছিল ছেলেবেলা থেকে।

তিনি জানালেন, নিউ ইয়র্ক থেকে ছেড়ে আসার অন্যতম কারণ ছিল এই দেশি শাক-সবজির বাগানের জন্য অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া।

“সত্যি বলতে নিউ ইয়র্কের ওয়েদার দেশি শাক-সবজির জন্য উপযুক্ত নয়। মাটিও আমাদের বীজের জন্য যথেষ্ঠ উপযোগী ছিল না। তাই ভাবলাম এমন কোথাও যাব যেখানে অন্তত নিজের শখ পূরণ করতে পারবো,” বলেন আরিফুল।

কথায় কথায় জানা হলো যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দিককার নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। ভাষাগত সমস্যা, কাজের অপ্রতুলতা তো ছিলই, সেইসঙ্গে চেনাজানা মানুষের অভাব।

“কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কাজ নেই। হতাশা গ্রাস করে নিয়েছিল। একটা সময় মনে হলো দেশে ফিরে যাই। যখন সেভাবে নিজেকে গুছাচ্ছিলাম তখনই পেলাম কাজের অফার। ভাবলাম, স্ট্রাগল যেহেতু করেছি, আরেকটু করে দেখি। সে-ই শুরু।”

তিনি জানান, ডালাসে স্থানান্তরিত হওয়ার পর বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা।

“নিজের সততা, পরিশ্রম দিয়ে একটা জায়গা তৈরি করে ফেলি। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমি যে কষ্টগুলো করেছি, চেষ্টা করি সেই একই কষ্ট যেন অন্য কোনো নতুন বাঙালিকে করতে না হয়,” যোগ করেন আরিফুল।

আরিফুল ইসলামের এই উদ্যোগ নজর কেড়েছে স্থানীয় প্রবাসীদের। তারাও এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন দেশি শাক-সবজির ফলনে। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বিনিসুতোর সবুজ সম্পর্ক!

আরও পড়ুন