গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে দেড় বছরের যুদ্ধে শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। তবে তার আগে তারা ইহুদি রাষ্ট্রটিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা করেছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই দাবি করে বলেছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইরানের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছিল হামাস।
ফিলিস্তিনি দলটির নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহামেদ দেইফের একটি চিঠির সূত্র ধরে কাৎজ রোববার এই দাবি করেন বলে টাইমস অব ইসরাযেল জানিয়েছে।
গাজায় হামাসের শীর্ষনেতা সিনওয়ার এবং দলটির সামরিক শাখার প্রধান দেইফ দুজনই ২০২৪ সালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যে হামলার পর গাজার এবারবার যুদ্ধ শুরু হয়, সেই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে দেইফকে দেখিয়ে আসছিল তেল আবিব।
ইরানের কাছে চিঠি পাঠানোর সঙ্গে ৭ অক্টোবর হামলার যোগসূত্র রয়েছে বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি।
ওই হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। তাতে এই পর্যন্ত অর্ধ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের একটি বড় অংশ শিশু।

বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে থাকা ইসরায়েল যুদ্ধের জন্য ওই হামলাকে কারণ দেখালেও নির্বিচারে বেসামরিক মানুষ হত্যার জন্য গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত।
তারমধ্যেই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা আত্মপক্ষ সমর্থনের একটি চেষ্টা হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। আর এ বিষয়ে হামাসের কোনো প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল কাৎজ গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া ২০২১ সালের জুন ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কিয়ানিকে লেখা সিনওয়ার ও দেইফের চিঠি দেখান।
তিনি বলেন, “কুদস ফোর্সের কমান্ডারের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে হামাসের দুই নেতা ৫০ কোটি ডলার চেয়েছিলেন ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য।”
ওই চিঠির ভিত্তিতে টাইমস অব ইসরায়েল লিখেছে, ইরানের কাছে প্রতি মাসে অন্তত ২ লাখ ডলার ২ বছর ধরে ওই অর্থ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।
গাজায় হামাস নেতাদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত একটি টানেল থেকে ওই চিঠিটি উদ্ধার করা হয় বলে কাৎজ জানান।
তিনি বলেন, ইরানের কুদস ফোর্সের ফিলিস্তিন বিভাগের প্রধান সাঈদ ইজাদি ওই চিঠির উত্তরে হামাসকে অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কারণ অর্থনৈতিক সঙ্কটে থাকার পরও ইরান শত্রু দেশ হিসাবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত করতে চেয়েছিল।

কাৎজ দাবি করেন, ইরানের সঙ্গে ওই পরিকল্পনা আঁটার পরই ২০২৩ সালে অকষ্মাৎ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আড়াইশ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরুর এক বছর পর ইরানের সঙ্গেও পাল্টপাল্টি হামলায় নামে ইসরায়েল। তাতে মধ্যপ্রাচ্যের বড় যুদ্ধের দামামা বাঁধলেও পরে দুই পক্ষই নিজেদের নিবৃত্ত করে।
হামাসের সঙ্গে ইরানের সখ্যের কথা সর্বজনবিদিত। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের হয়ে হামাস ছায়াযুদ্ধ চালায় বলে ইসরায়েলের অভিযোগ।
হামাসের শীর্ষনেতা, ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়েকে গত বছর তেহরানে হামলা চালিয়ে হত্যা করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, হামাস ইরানের সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা আঁটলেও তা তারা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। গত দেড় বছরের যুদ্ধে হামাসকে অনেকটাই নেতৃত্বশূন্য করা গেছে।
এদিকে যুদ্ধে একের পর এক নেতাকে হারিয়ে হামাসের সক্ষমতা অনেক কমে গেলেও দলটি মনোবল হারায়নি।
সম্প্রতি হামাসের নেতা ওসামা হামাদান এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তারা এখনও ইসরায়েলকে প্রতিরোধের সামর্থ্য রাখেন।
“আমাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন, তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিপরীতে আমাদের দলে আরও নতুন যোদ্ধা যুক্ত হয়েছে। তারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে নিচ্ছেন,” বলেন তিনি।
হামাদান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই অঞ্চলের সবাইকে বলতে চাই, ইসরায়েল ধরা-ছোঁয়ার বাইরের কিছু নয়। ইসরায়েলের সামর্থ্যেরও একটি সীমা আছে।”