ডিসেম্বর-জানুয়ারি বিয়ের মৌসুম। বিয়ের ধকল কাটিয়ে নবদম্পতিরা একটু নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে চান। কেউ পাহাড় তো কেউ চান সমুদ্র পাড়ে একান্তে প্রেম – কলহ উপভোগ করতে। মধুচন্দ্রিমা রোমাঞ্চের স্বাদ বয়ে আনে নব দম্পতিদের জীবনে। গত কয়েক বছরে বিদেশ ভ্রমণ বাংলাদেশিদের কাছে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিসা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে না চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই দেশগলো থেকে।
নেপাল
নেপাল শব্দের অর্থ পবিত্র গুহা। নেপালে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বন্যপ্রাণী পর্যটন এই দেশের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে কিছু বন্যপ্রাণী আছে যা একমাত্র নেপালে দেখা যায় যেমন স্পিনি ব্যাব্লার। নেপালে বিভিন্ন প্রজাতির রডোডেন্ড্রনও দেখা যায়। হিমালয় দর্শনেও বহু মানুষ এখানে ছুটি আসেন। বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল পাওয়া যায়। কাছের মানুষের সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়ে আসতে পারেন নেপাল থেকে।
ভুটান
পাহাড়, ঘন অরণ্য, তিব্বতি গুম্ফা সব নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রহস্যে ঘেরা দেশ ভুটান। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত শান্ত নিরালা দেশ পর্যটক দের আকর্ষণ করে। এটি “গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস” ধারণার জন্য পরিচিত। পারো ভ্যালি, পুনাখা ভ্যালি থেকে প্রিয় মানুষের সঙ্গে এখানের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। তাকসাং মোনাস্ট্রির এক ঝলক আপনার মনে প্রশান্তি নিয়ে আসবে। দাতসি,রেড রাইস এবং সুজা (নোনতা চা) ভুটানের অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। দেশের খুব কাছে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে এটি হবে আপনার জন্যে আদর্শ জায়গা। বাংলাদেশিদের জন্য ভুটান ভিসা অন অ্যারাইভাল দিয়ে থাকে।
মালদ্বীপ
পৃথিবীর টপ টেন হানিমুন ডেস্টিনেশনগুলোর মধ্যে মলদ্বীপ অন্যতম। তারকাদের অনেককেই মাঝে মধ্যে মলদ্বীপে ছুটি কাটাতে দেখা যায়। গত কয়েক বছর ধরে এটি একান্তে ছুটি কাটানোর অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে। মাছ এই দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলেও বর্তমানে দেশটি পর্যটন শিল্পেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। সাদা বালির সৈকত, নারকেল গাছ, নীল জলের মাঝে সুন্দর ভিলা দেখে মুগ্ধ হবেন। মালদ্বীপ ৩০ দিনের জন্য বিনামূল্যে ভিসা দিয়ে থাকে। হানিমুন ডেস্টিনেশন এর পছন্দের তালিকায় মালদ্বীপকে রাখতে পারেন।
ফিজি
ফিজি একটি উষ্ণ, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুর দেশ। এখানে ৩৩২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে এবং ১০৬টি দ্বীপে মানুষের বসবাস। এই স্থানটির মুক্তো সাদা-বালির সৈকত এবং সবুজ গাছপালা আপনাকে রুপকথার রাজ্যে নিয়ে যাবে। ফিজিতে যাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকিট এবং হোটেল বুকিংয়ের তথ্য প্রয়োজন। একটু অফবিট হানিমুন ডেস্টিনেশন চাইলে এটি হতে পারে আপনার জন্যে আদর্শ।
শ্রীলঙ্কা
অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর দেশ। যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে। হিন্দু ধর্মে বর্ণিত রাবণের লঙ্কা রাষ্ট্রই হলো আজকের শ্রীলঙ্কা। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করেন। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে আপনি নিম্নলিখিত প্রধান স্থানে যেতে পারেন: ক্যান্ডি,সিগিরিয়া রক ফোর্ট্রস, নুয়ারা এলিয়া, গলে ফোর্ট, ইলা। স্থানীয় খাবারের মধ্যে কট্টু, হপারস, এবং রাইস অ্যান্ড কারি অবশ্যই চেখে দেখবেন। প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন। ভিসা ফ্রি রয়েছে বাংলাদেশিদের জন্যে।
ভানুয়াতু
নির্জন দ্বীপের বর্ণময় পরিবেশে মধুচন্দ্রিমা তথা ছুটির দিন অতিবাহন করতে চাইলে আপনি ভানুয়াতুকে অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন । এখানে আপনি দ্বীপের সৌন্দর্যে মোহিত হওয়ার সঙ্গে সাথেই আগ্নেয়গিরি রূপ পরিদর্শন করতে পারেন এবং দ্বীপের মধ্যে ছোট্ট রোড ট্রিপেরও পরিকল্পনা করতে পারেন।
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তীর্ণ এই দ্বীপ টি ৮০টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এই অঞ্চলের প্রধান রাজধানী শহর হল হারবারসাইড পোর্ট ভিলা। আর এই শহরের আইল্যান্ড অফ ফেট পর্যটকদের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দেশটির মধ্যে মোট ছয়টি প্রধান প্রদেশ রয়েছে। বিনা ভিসায় যে কোনও বাংলাদেশের নাগরিক ৩০দিন ভানুয়াতু ভ্রমণ করতে পারেন।
কুক আইল্যান্ড
প্রায় ১৫টি দ্বীপের সমাহারে তৈরি প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপটি স্বতন্ত্র পরিচালিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। কুক দ্বীপপুঞ্জের সর্ব বৃহৎ আগ্নেয়াগিরি হল রারোতোঙ্গা। আর এই দ্বীপের প্রধান রাজধানী শহর হল অভারুয়া। এই শহরটি এই দ্বীপের প্রধান বাণিজ্যিক এবং সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এই দ্বীপে আপনার জন্য রয়েছে স্বচ্ছ নীল সাগর, প্রবালের প্রাচীর, সামদ্রিক হ্রদ, রুক্ষ্ম পাহাড়, সমুদ্রের অদূরে ঘন অরণ্য ইত্যাদি। এই দ্বীপ ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিদের ৩১ দিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড
সবুজ পাহাড় ঘেরা, প্রবালের প্রাচীর দ্বারা পরিপূর্ণ এবং বোটের সমাহারে কোনও দ্বীপপুঞ্জে হানিমুনের ছুটি কাটাতে চাইলে পৌঁছে যেতে পারেন ক্যরিবিয়ান আইল্যান্ড-এর স্বর্গ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড -এ। এই দ্বীপের কিছুটা অংশ ক্যরিবিয়ান-এর অর্চিপেলাগো আগ্নেয়গিরি এবং ব্রিটিশ ওভার্সেস অঞ্চলের সম্মিলনে গঠিত। দ্বীপের চারটি বৃহৎ এবং কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপের সমাহারে সম্পূর্ণ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের সৃষ্টি। এই দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপটি হল তোরতোলা এবং এই দ্বীপের মধ্যেই রাজধানী শহর রেড টাউন অবস্থিত। পর্যটনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বাংলাদেশের নাগরিকদের ৩১দিনের জন্য বিনা ভিসায় ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় ।