হামজা চৌধুরী যেভাবে বাংলাদেশের হলো

বাংলাদেশের হয়ে খেলার অপেক্ষায় হামজা। ছবি: লেস্টার সিটি এফসি
বাংলাদেশের হয়ে খেলার অপেক্ষায় হামজা। ছবি: লেস্টার সিটি এফসি

বাংলাদেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা কে? অনেকেই বলবেন, কাজী সালাউদ্দিন। বাংলাদেশিদের মধ্যে বিদেশ গিয়ে প্রথম পেশাদার লিগ তিনিই খেলেছেন। কেউ কেউ জামাল ভূইয়ার কথাও বলতে পারেন। তিনিও ইউরোপের একটি দেশে লিগ খেলে এখন আর্জেন্টিনায় খেলছেন। তবে প্রশ্নটির উত্তর দিতে এখন নতুন করে ভাবতে হবে।

কারণ কী? কারণ এসে গেছেন হামজা চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটিতে খেলা এই ফুটবলার এখন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়াতে যাচ্ছেন। ফিফা অনুমতি দিয়েই দিয়েছে, এখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে তার মাঠে নামার অপেক্ষা।

এমন একটি দেশের ফুটবল লিগের শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাবে খেলছেন হামজা, যাদের ফিফা ব্যাংকিংয়ে অবস্থান এখন ৪ নম্বরে; আর তিনি খেলবেন র‌্যাংকিংয়ে ১৮৫ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের হয়ে।

ফলে এর চেয়ে বড় তারকা বাংলাদেশের ফুটবলে আর কাকে বলা যায়? আবার বর্তমানে ২৭ বছর বয়সী হামজা এক সময় ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলেও ছিলেন, সেই দলের হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

ফলে হামজার একার ওজন যে বাংলাদেশের গোটা ফুটবলের চেয়েও বেশি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই হামজাকে দেশের হয়ে আনতে পেরে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বৃহস্পতিবারই হামজার ফিফার ছাড়পত্র পাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বাফুফের ফেইসবুক পেইজে। সেই পোস্টে হামজার একটি ভিডিও বার্তাও দেওয়া হয়; সেখানে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে যাচ্ছি। শিগগিরই দেখা হবে।”

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার শুরুচা হয় ২০১৩ সালে জামাল ভূইয়াকে দিয়ে। তিনি ডেনমার্কে ছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে ফিনল্যান্ড থেকে আসেন তারিক কাজী। তবে উচ্চতায় সবাইকে ছাপিয়ে এখন হামজা।

জন্ম-বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে

হামজা দেওয়ান চৌধুরীর জন্ম লেস্টেশায় ১৯৯৭ সালে। তার মা বাংলাদেশি, বাবা গ্রানাডিয়ান। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে নানা বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল ঘুরেও গেছেন তিনি।

হামজা ২০১৯ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, “আমি বাংলাদেশে যা খুশি, তা করতে পারতাম। আমি বাংলা বলতে পারি, এটা জেনে মানুষ আসলেই বেশ অবাক হতো।”

হামজার ফুটবলে ঝোঁকা তার মায়ের হাত ধরেই। তার মা এক বার

তাকে নিয়ে লাফবোরো ইউনিভার্সিটিতে যান, সেখানে ফুটবলের একটা আয়োজন ছিল, সেটাই ছিল শুরু। হামজার মা রাফিয়া চৌধুরীও ছেলেকে খেলায় উৎসাহ জুগিয়ে যান। সমর্থন দেন তার সৎ বাবা মুরশিদ দেওয়ানও।

মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হামলা বলেন, “আমার মা অনেক শক্তিশালী একজন নারী, যিনি আমাকে শিখিয়েছেন, কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে হয়।”

আমার মা অনেক শক্তিশালী একজন নারী, যিনি আমাকে শিখিয়েছেন, কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে হয়।

হামজা ফুটবল শিখেছেন লেস্টার সিটি একাডেমিতে। ২০১৭ সালে এই ক্লাবের মূল দলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নামেন। অধিনায়কত্ব করেছেন ক্লাবটিতে এবং এফএ কাপও জিতেছেন। ঝাঁকড়া চুলের এই মিডফিল্ডার খেলেছেন ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ ও এর পরের ধাপ উয়েফা কনফারেন্স লিগেও।

যেভাবে বাংলাদেশের

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশের পর চার-পাঁচ বছর আগেই তার সঙ্গে ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু নানা শর্তে তা আটকে গিয়েছিল।

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে প্রথমেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে হবে, পেতে হবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট।

দ্বিতীয় শর্ত হলো, তার মা–বাবার যে কোনো একজনের বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকতে হবে, বাবা-মায়ের না থাকলে দাদা বা দাদি কিংবা নানা বা নানির থাকতে হবে।

তৃতীয় শর্ত হলেঅ, ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্র নিতে হবে তাকে।

এর আগে হামজা ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন। তবে ফিফার নিয়মানুযায়ী, যেহেতু ২১ বছর বয়সের পর তিনি ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলেননি, তাই তার বাংলাদেশের হয়ে খেলতে বাধা ছিল না।

হামজার জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তার মা বাংলাদেশি হওয়ায় তার পাসপোর্ট পাওয়ার কোনও বাধা ছিল না। এ বছরই হামজা বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। গত অগাস্টে পেয়েও যান।

এরপর হামজার ক্লাব লেস্টার সিটি এবং ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতির পর ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি গত ১৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

অনেকেই প্রত্যাশা করছিলেন হামজা চৌধুরী নভেম্বরে মালদ্বীপের বিপক্ষেই বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন। ফিফার অনুমতি পেতে দেরির পাশাপাশি খানিকটা চোটেও ভুগছিলেন এই লেস্টার সিটি মিডফিল্ডার।

সূচি অনুযায়ী হামজা চৌধুরী মার্চে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কোয়ালিফায়ারের ম্যাচ খেলতে পারেন, যদি না তার আগে বাংলাদেশের কোনও প্রীতি ম্যাচ থাকে।

শুধু বাংলাদেশের হয়ে খেলতেই চান না হামজা; তিনি এদেশে ফুটবলারদের ইউরোপের পথও চেনাতে চাইছেন, সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন