ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ

যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত শুধু কিয়েভ নয়, যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনের পাশে থাকা তার ইউরোপীয় মিত্রদের জন্যও একটি বড় ধাক্কা।

তবে এবারই যে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়েছে তা নয়। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা ইউক্রেনকে দেওয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামরিক সহায়তা প্যাকেজও আটকে দিয়েছিল।

তখন মজুদ গোলা-বারুদ ও ইউরোপের সহায়তায় কোনো রকমে যুদ্ধে টিকে থাকতে সক্ষম হয় ইউক্রেন।

বাধা কাটিয়ে ২০২৪ সালের বসন্তে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ৬০ বিলিয়ন পাউন্ডের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে। এমন সময়ে এই অনুমোদন এসেছিল, যখন ইউক্রেন খারকিভে রাশিয়ার নতুন আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া নতুন এই অস্ত্রের জোগান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছিল।

ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধের প্রভাব পড়তে এবারও কয়েক মাস লাগতে পারে। যদিও ২০২৪ সালের পর ইউরোপীয় দেশগুলো ধীরে ধীরে গোলাবারুদ উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং ইউক্রেনের মোট সহায়তার ৬০ শতাংশ দিয়ে আসছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি।

তারপরও ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক পশ্চিমা কর্মকর্তা সম্প্রতি অস্ত্রের ক্ষেত্রে এই সহায়তাকে ‘সেরা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এ ছাড়া ইউক্রেন তার মানুষ ও শহরগুলোকে রক্ষায় অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি ও এনএএসএএমএসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।

এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার এইচআইএমএআরএস ও এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার রাশিয়ার অভ্যন্তরে সীমিত করা হলেও দখলকৃত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় ভূমিকা রাখছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র শুধু গুণগত মানে নয়, পরিমাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র শত শত অতিরিক্ত হামভি ও সুরক্ষিত যানবাহন পাঠাতে সক্ষম, যা ছোট ইউরোপীয় কোনো সেনাবাহিনীর নেই।

সমরাস্ত্র সাহায্য বন্ধের প্রভাব যুদ্ধের ময়দানে পড়তে কিছুটা সময় লাগলেও বড় চিন্তার কারণ হবে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি। যার প্রভাব তাৎক্ষণিক হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

কেননা মহাকাশভিত্তিক নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো দেশেরই তুলনা চলে না। আর এই সহায়তা ইউক্রেন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী নয়, বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেও পেয়ে থাকে।

এমনকি ইউক্রেনের প্রতিটি যুদ্ধের ময়দানে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক ডিশ রয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বশেষ তথ্য জানাতে ব্যবহৃত হয় এবং আর্টিলারি ও ড্রোন হামলা সমন্বয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এর আগে পেন্টাগন এ বিষয়ে অর্থ সহায়তার কথা স্বীকারও করেছে। তবে এখন যেহেতু ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কির কঠোর সমালোচক, তাই তার এই সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কি ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের নির্মিত সরঞ্জাম ইউক্রেনে পাঠাতে বাঁধা দেবে? বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না হলেও এর আগে ইউরোপ যখন ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এফ-সিক্সটিন জেট দিতে চায়, তখন তাদের ওয়াশিংটনের অনুমোদন নিতে হয়েছিল।

শুধু অস্ত্র সহায়তা নয়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণেও সহায়তা দিয়েছে এসেছে এ যাবৎ। সামরিক সহায়তা বন্ধের হয়ে যাওয়ায় এগুলোর ভবিষ্যৎও অজানা।

তবে বাইডেন তার প্রশাসনের শেষের দিকে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকাদারদের কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ করে এফ-সিক্সটিন জেটগুলোর ইঞ্জিনিয়ার এবং স্পেয়ার পার্টস সরবরাহের মাধ্যমে যাতে সেগুলো চালু রাখা যায়।

ইউক্রেনেকে ট্রাম্পের সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত কিয়েভ এবং তার বাইরের অনেকের কাছে একটি ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া মনে হলেও, এটা স্পষ্ট যে জেলেনস্কিকে আলোচনা টেবিলে আনার লক্ষ্যে এটি একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

জেলেনস্কির ইউরোপীয় মিত্ররা এই পদক্ষেপ যেন একটি বিরতিই হয়ে থাকে, সেই প্রত্যাশাই করছেন। কেননা মার্কিন সমর্থন ছাড়া ইউক্রেনের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠবে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads