ভাবুন তো, প্রবীণদের সেবাকেন্দ্রে সেবা দেওয়ার কাজ সঁপে দেওয়া হলো এমন কোনো রোবটের কাছে যে যেচে গিয়ে সমস্যা জানতে চাইছে; স্বাস্থ্য সহকারীদের মতোই প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছে, তা-ও আবার ‘হাসিমুখে’, তাহলে কেমন হবে?
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চংকিং শহরের একটি প্রবীণ সেবাকেন্দ্রে এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে ইদানিং। কারণ সেখানে নতুন ধরনের একটি রোবট নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যে কি না প্রবীণদের জটিল আবেগীয় অনুভূতি মেটাতেও সক্ষম।
চংকিংয়ের ‘সোশাল ওয়েলফেয়ার হোম’ রোবটটির নাম দিয়েছে পেইপেই। এই নারী রোবটটি নম্র, ভদ্র, সহনশীল এবং ভালো শ্রোতা। সেই সঙ্গে বাকপটু।
সেবাকেন্দ্রের ৮৬ বছর বয়সী ওয়াং বলেন, “তোমার কোনো প্রশ্ন থাকলে শুধু পেইপেইকে জিজ্ঞাসা করো; সে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।”
এ প্রবীণ প্রায়ই পেইপেইয়ের সঙ্গে আড্ডা দেন; কখনো গল্প করেন বা ই-গেইমস খেলেন। আবার কখনও নিজের ছবি তুলে দিতে এবং সেখান থেকে বয়সের ছাপগুলো মুছে দিতেও পেইপেইয়ের সাহায্য নেন।
তিনি আরও বলেন, পেইপেই তার ভালো ঘুম হচ্ছে কি না এবং তার মন খারাপ কি না- এরকম ছোট ছোট বিষয়গুলোর বেশ খেয়াল রাখে।

“রোবটটি তাকে সার্বক্ষণিক স্বস্তি দিতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যায়; বিদেশে অধ্যয়নরত তার নাতনিকে মনে করিয়ে দেয়। প্রতি সপ্তাহে ভিডিও কলে কথা হলেও সে তো আর যখন-তখন আসতে পারে না।”
রোবটটির নির্মাতা মাশাং কনসিউমার ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ অ্যালগরিদম প্রকৌশলী শিয়াং গোহুই বলেন, “পেইপেই শব্দটি ‘সঙ্গীর’ প্রতিশব্দ।”
তিনি আরও জানান, কোম্পানি কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং এআই মনস্তাত্ত্বিক ও বহুমুখী আবেগীয় বিষয়গুলো মাথায় রেখে রোবটটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক আবেগময় সঙ্গ, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, বিনোদন এবং অবসর কাটানোর ব্যবস্থা করতে সক্ষমতা দিয়েছে।
শিয়াং আরও বলেন, কোম্পানির গবেষক দল অনুসন্ধান করে দেখেছে যে প্রবীণ নিবাসগুলোতে আবেগীয় সঙ্গের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
প্রবীণরা স্মৃতিকাতর এবং একই কথা বার বার বলে যান। আর পেইপেই নিরলসভাবে জবাব দিয়ে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

ইনস্টিটিউটটির ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ মিন বলেন, যে প্রবীণরা সেবাকেন্দ্রে আসে তারা একাকিত্ব থেকে জনবিচ্ছিন্নতার দিকে চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ সেবার প্রয়োজন হয়।
এমন প্রবীণদের ২৪ ঘণ্টা মানসিক এবং আবেগীয় প্রয়োজন মেটানো সেবাদানকারী কর্মীদের জন্য অসম্ভব। সেখানে এই রোবট সেইসব প্রবীণদের ২৪ ঘণ্টাই সঙ্গ দিতে পারছে বলেও জানান তিনি।
লিউ আরও বলেন, রোবটটি শুধু যে তাদের জীবন চলার সাথী হয়ে উঠেছে, তা নয়; তাদের সামনে প্রযুক্তির একটা জানালাও খুলে দিয়ে ডিজিটাল সমাজের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতেও সহায়তা করছে। এছাড়া পেইপেইয়ের সংস্পর্শে এসে তারা ‘হিউম্যানয়েড রোবট’ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
রোবটটির বুদ্ধির মাত্রা এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে জানিয়ে শিয়ান বলেন, সামগ্রিক অগ্রগতির পর রোবটটি প্রবীণ সেবাকেন্দ্রের সকল ক্ষেত্রে কাজ করতে পারবে।
২০২৪ সালে শেষে এসে দেখা যায় চংকিং শহরের ৬ মিলিয়নেরও বেশি লোক ৬৫ বেশী বয়সের; যা শহরিটির জনসংখ্যার ১৮.৯ শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক প্রবীণদের সেবার ঘাটতি কমাতে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিগত সমাধান গড়ে তোলার চেষ্টা করছে চীন সরকার।
সিনহুয়া অবলম্বনে