সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত ‘রবীন্দ্র কাব্য রহস্য’ ছবির রহস্যের কেন্দ্রে যে আপামর বাঙালির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটা এতদিনে সবার বুঝতে পারার কথা। প্রো এবং অ্যান্টি রবি ঠাকুর দল বহুদিন থেকেই বিরাজ করছে। তার নোবেল পাওয়া, জাতীয় সংগীত নিয়ে নানা থিওরিও আছে। জাতীয়তাবাদ, স্বদেশি আন্দোলন নিয়ে রবি ঠাকুরের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে ছবি হলে সেটা তখনই অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে যখন ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের দিগন্তরেখা ক্রমশ আবছা হয়ে আসে। এবং সেটা যদি কোনও ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে নিয়ে হয় তাহলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায়, কারণ বিতর্কিত অবস্থান নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত ‘রবীন্দ্র কাব্য রহস্য’ ছবির রহস্যের কেন্দ্রে যে আপামর বাঙালির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটা এতদিনে সবারই বুঝতে পেরে ওঠার কথা। প্রো এবং অ্যান্টি রবি ঠাকুর দল বহুদিন থেকেই বিরাজ করছে। তার নোবেল পাওয়া, জাতীয় সংগীত নিয়ে নানা থিওরি আছে। জাতীয়তাবাদ, স্বদেশি আন্দোলন নিয়ে রবি ঠাকুরের অবস্থান নিয়েও অনেক প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সায়ন্তনের ছবি তেমনই দুই পক্ষের লড়াই নিয়ে থ্রিলার। ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’-এর কথা মনে পড়তে পারে। কিন্তু ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে ভারতের ‘গ্লোবাল সফট পাওয়ার’-কে নড়িয়ে দিতে রবি ঠাকুরকে টার্গেট করবে অন্য দেশ– এটা মেনে নিতে একটু বেশি কষ্ট করতে হয়।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভারতে রবি ঠাকুরের চেয়েও রাম বেশি জনপ্রিয়, কিংবা নিদেনপক্ষে বলিউড! তবে বাঙালির কাছে কবিগুরুর ধারে কাছে কেউ নেই। এই ছবির সময়কাল ১৯১২-র লন্ডন এবং ২০২১-এর লন্ডন ও কলকাতা। একের পর এক মার্ডার এবং মৃতদেহের পাশে রবীন্দ্রনাথের কবিতার ক্লু। লন্ডন ও কলকাতায় খুনের একই প্যাটার্ন। কলকাতা পুলিশ সাহায্য নেয় কবি-গোয়েন্দা অভীক সেনের (ঋত্বিক চক্রবর্তী)। অভীক লন্ডন যায়! সেখানে রবীন্দ্র-সাহিত্য বিশেষজ্ঞ বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় (সুজন মুখোপাধ্যায়), রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিয়া সেন (শ্রাবন্তী), এবং সাংবাদিক শালিনী সেনগুপ্তর (বিদীপ্তা চক্রবর্তী) সঙ্গে আলাপ হয়। অভীকের হাতে রয়েছে এক জটিল ধাঁধা, যা উদ্ধার করলে পাওয়া যেতে পারে অপ্রকাশিত রবীন্দ্র কাব্য! সত্যি কি তাই! সেটা জানার জন্য ছবিটা দেখতে হবে।
রহস্যের ছবি, তবে প্রথমার্ধ একটু ধীর গতির। ফ্লাশব্যাকে রবীন্দ্রনাথ (প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়) ও বিশেষ চরিত্রে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ও রাজনন্দিনী পালকে দেখা গেলেও সেই পিরিয়ড খুব বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তবে মেনে নিতেই হয়, প্রিয়াংশুকে দারুণ মানিয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরিত্রে।
ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং শ্রাবন্তীর জুটি অনেকদিন পর একে অপরের সঙ্গে । তাদের সম্পর্কের গ্রাফ দেখতে মন্দ লাগে না । চিত্রনাট্য আরও মজবুত হলে এই থ্রিলার আরও জমাট বাঁধতে পারত! বিষয়ের অভিনবত্ব প্রশংসার দাবি রাখে, কারণ এই ধরণের থ্রিলার বড় একটা দেখা যায় না । বিশেষ করে এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে যেভাবে ফ্যাক্ট এবং ফিকশন গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই নিরিখে খানিক প্রাসঙ্গিক তো বটেই । যারা রবীন্দ্রজীবন নিয়ে চর্চা করেন তাদের এই ছবি ভালো লাগতে পারে।
সংবাদ প্রতিদিনে লিখেছেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়