অ্যান্টার্কটিকা থেকে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর বৃহত্তম হিমশৈল। এর সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি দেখে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের গবেষকরা বলছেন, হিমবাহটি সাউথ জর্জিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে এ অঞ্চলের সিল, পেঙ্গুইনের মতো প্রাণিদের স্বাভাবিক বিচরণ।
পৃথিবীর বৃহত্তম এই হিমশৈলের আয়তন প্রায় দক্ষিণ আটলান্টিক দ্বীপের সমান, লন্ডনের দ্বিগুণ। অর্থাৎ আয়তন চার হাজার ২০০ বর্গ কিলোমিটার। হিমবাহটির ওজন কয়েকশ’ বিলিয়ন টন।
হিমশৈলটি এখন সাউথ জর্জিয়া থেকে ১৭৩ মাইল (২৮০ কিমি) দূরে অবস্থান করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দ্বীপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটি টুকরা টুকরা হয়ে যেতে পারে।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের গবেষক জেরেইন্ট টারলিং বলছেন, “সবচেয়ে বিপদ হতে পারে যদি হিমবাহটা কোথাও এসে থমকে যায়। এর আয়তন ও ওজন এতই যে, অন্তত ১০ বছর তা সেখানেই আটকে থাকবে। আর তাতে পেঙ্গুইন, সিলদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।”
অ্যান্টার্কটিকা থেকে নেমে আসা বহু হিমবাহ সাধারণত সাউথ জর্জিয়ায় এসে গতিপথ শেষ করে। তাই এই এলাকাকে হিমবাহের সমাধিস্থল বলে থাকে অনেকে। এখানকার উপকূল অংশে খণ্ডবিখণ্ড বহু হিমশৈলের অংশ এমনভাবে পড়ে থাকে, কখনও তা ভাস্কর্যের রূপ নেয়। এই অবস্থায় হিমবাহের গতিশীলতা থেমে যায়। আর এগিয়ে যেতে পারে না। এরপর খুব ধীরে ধীরে গলতে থাকে।
এসব হিমশৈলের টুকরো অনেক সময়েই স্থানীয় প্রাণী অর্থাৎ পেঙ্গুইন, সিলদের অবাধ বিচরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সবচেয় বড় এই হিমবাহের কারণে সেই বাধা আরও বড় হয়ে দাঁড়াবে বলেই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।
এছাড়া হিমবাহের যা আয়তন, তাতে হিমবাহের চূড়া ভেঙে সমুদ্র পড়লে বহু সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
অতীতে হিমশৈলের ধাক্কায় সাউথ জর্জিয়ার বরফাচ্ছাদিত সাগরতীরে বিচরণকারী অগণিত পাখি ও সিল মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খাবার সংগ্রহের পথ রুদ্ধ হয়ে এদের মারা যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
বিশাল হিমশৈলের কারণে সাউথ জর্জিয়া ও স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ হুমকিতে পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়; ২০০৪ সালে এ৩৮ নামের একটি হিমশৈল দ্বীপের মহীসোপান বা কন্টিনেন্টাল শেলফের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কারণেও এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। বিশাল বরফের টুকরার কারণে খাবার সংগ্রহের পথ বন্ধ হয়ে সমুদ্রতীরের অনেক পেঙ্গুইন ও সিল মারা যায়।
অঞ্চলটি কিং এমপেরর পেঙ্গুইনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আবাসস্থল। বহু এলিফ্যান্ট ও ফার সিলের আবাসও এখানে।
সমুদ্রবিষয়ক গবেষক অ্যান্ড্রু মেইজার্স বলেন, “সাউথ জর্জিয়া আইসবার্গ অ্যালিতে অবস্থিত। তাই মৎস্য ও বন্য প্রাণী—উভয়ের ওপরই এর (হিমশৈলটির সংঘর্ষ) প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে এবং উভয়েরই পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “হিমশৈলগুলো ক্রমাগত সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে এ৭৬ নামের একটি হিমশৈলকে আছড়ে পড়তে দেখে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছিলেন।”
গার্ডিয়ান অবলম্বনে