ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর প্রয়াগরাজে চলছে বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দুদের ধর্মীয় সমাবেশ কুম্ভ মেলা। ১৩ জানুয়ারি থেকে চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলা আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
১২ বছর পর পর আয়োজিত হয় কুম্ভ মেলা। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগরাজে হয় অর্ধকুম্ভ মেলা। শেষবার কুম্ভ মেলা হয় ২০১৩ সালে। সে হিসাবে এবছর ২০২৫ সালে ফের অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুম্ভ মেলা।
কুম্ভ মেলা আয়োজিত হচ্ছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে লক্ষ লক্ষ ভক্ত জড়ো হয়েছেন পুণ্যস্নান করতে।
পূণ্যতিথিতে স্নান করতে সাধু-সন্ন্যাসিনীরা ভিড় করতে শুরু করেছেন কুম্ভ মেলায়। তাদের মধ্যে অনেকেই নজর কেড়েছেন নানা কারণে।
এদের মধ্যেই এক জন হলেন ‘আইআইটি বাবা’। ভক্তেরা তেমনটা নাম দিলেও তার প্রকৃত নাম অভয় সিং, তিনি নিজেকে শ্রেফ ‘ভবঘুরে সন্ন্যাসী’ বলেই পরিচয় দিয়েছেন।
মকর সংক্রান্তির পুণ্যতিথির দিনে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে ‘আইআইটি বাবা’কে খুঁজে পান একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিক। তরুণী সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎকার নেন তিনি। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে।
মুম্বাই আইআইটি থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পরে সংসার জীবন ত্যাগ করেছেন অভয়। তাও খুব বেশি সময় আগে নয়, বছর দেড়েক আগে। বেছে নিয়েছেন আধ্যাত্মিকতার পথ।
ভারতে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়া পড়ুয়াদের জন্য স্বপ্নপূরণের সমান। অ্য়াকাডেমিক ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রেরাই কেবল আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
আইআইটিতে পড়াশোনা শেষ করে ফটোগ্রাফি ও ডিজাইনিং নিয়েও পড়েছেন অভয়। কাজ করেছেন ছবি তোলার, এছাড়া শিক্ষার্থীদের পদার্থবিদ্যার প্রশিক্ষণও দিয়েছেন বছরখানেক। চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন কানাডাতেও। বছর তিনেক সেখানে থেকে ভারতে ফিরে আসেন।
সদাহাস্য এবং শান্ত স্বভাবের অভয় জানিয়েছেন যে, জীবনের অর্থ বোঝার জন্য উত্তর-আধুনিকতাবাদ, সক্রেটিস এবং প্লেটোর দর্শন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেশ কয়েক বার কেরিয়ার বদলে ‘মৌলিক বিষয়গুলিতে’ মনোযোগ দিতে শুরু করেন তিনি।
“আমি এখন বুঝতে পারি আমি এখন যা আহরণ করছি, সেটাই আসল জ্ঞান। যদি আপনি মন বা মানসিক স্বাস্থ্য ভাল করে বুঝতে চান, তা হলে আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে তা অর্জন করতে পারেন।’’
অভয় সিং ছাড়াও মহাকুম্ভ মেলায় নজর কেড়েছে আরও ৪ ব্যক্তি। অন্তর্জালে তাদের নিয়ে চলছে চর্চা।
এক সাধু তো হার্লে ডেভিডসন চালিয়ে কুম্ভ মেলায় ঢুকেছেন। সাধু হয়েও এত দামী বাইক নিয়ে মহাকুম্ভে তাকে আসতে দেখে তা সকলের নজর কেড়েছে।
চাওয়ালা বাবাও দারুণ জনপ্রিয় হয়েছেন এই মেলায়। তিনি আগে চা বিক্রেতা ছিলেন। তারপর সাধু হন। গত ৪০ বছর ধরে তিনি যে ছাত্র ছাত্রীরা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন তাদের পড়ান।
স্টিভ জবসের স্ত্রী এসেছেন কুম্ভ মেলায়। এই মেলায় তার গুরু স্বামী কৈলাশনন্দ গিরি হিন্দু নাম দিয়েছেন। প্রয়াত অ্যাপেল প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী এখন কমলা।
জনপ্রিয় স্কাইড্রাইভার মহাকুম্ভ উপলক্ষে ব্যাংককের উপর ১৩ হাজার ফিট উঁচুতে মহাকুম্ভের পতাকা উড়িয়েছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা অনামিকা শর্মা। তিনিও এখন কুম্ভ মেলার আলোচনার কেন্দ্রে।
সাধু সন্ন্যাসীদের কাছে সব কুম্ভই গুরুত্বপূর্ণ। নানা প্রাপ্ত থেকে কুম্ভমেলায় যোগ দিয়েছে নাগা সন্ন্যাসীরা।
নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার প্রক্রিয়া বেশ কঠিন এবং দীর্ঘ। একজন সাধারণ মানুষের নাগা সন্ন্যাসীর হয়ে উঠতে কমপক্ষে প্রায় ছয় বছর সময় লাগে।
এবারের মহাকুম্ভ মেলায় চার হাজার হেক্টরের বিস্তৃত তাবু সাধু-সন্ত, তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে ৩ হাজারের বেশি রান্নাঘর, দেড় লাখ শৌচাগার, ১১টি হাসপাতাল, সড়ক, বিদ্যুৎ, পানীয় জল এবং টেলিযোগাযোগের সুব্যবস্থা।
যাতায়াত সহজ করতে ভারতীয় রেলওয়ে ৯০টি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে, যা ৩ হাজার ৩০০ বার চলাচল করবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছেন ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী। রয়েছে আড়াই হাজার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।