ঋণের কিস্তি ছাড়ে বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রাখলো আইএমএফ

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সদর দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সদর দপ্তর।

ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পায়নি বাংলাদেশ। শর্তপূরণ হলে জুনের শেষদিকে দুই কিস্তির অর্থ দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে আইএমএফ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে।

বৃহস্পতিবার আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শর্ত পূরণ না হওয়ায় কিস্তি ছাড়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”

এর আগে ক্রিসের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল ২ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে।

ক্রিস বলেন, “আমাদের আলোচনা এখনও চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুটি আলোচিত হবে।”

তবে কিস্তি ছাড়ে ‘স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা কর্মকর্তা পর্যায়ের সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলে পর্ষদে অনুমোদন পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি মিলিয়ে প্রায় ১১৫ থেকে ১৩০ কোটি ডলার ছাড়ের জন্য এখন বাংলাদেশকে আইএমএফের চারটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে হবে। 

এর মধ্যে রয়েছে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, কর সংস্কার, ভর্তুকি কমানো এবং ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ।

আইএমএফ বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে জোর দিলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই তা পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নয়। তবে এখনকার সময়টি ‘বাজারভিত্তিক বিনিময় হার বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত’ বলেও মনে করছেন ক্রিস। কারণ ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান কমেছে এবং রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল।

আইএমএফ বলছে, কর ও জিডিপি অনুপাতেও তেমন অগ্রগতি নেই। এসব ক্ষেত্রে সংস্কারে শিগগির পদক্ষেপ নিতে হবে।

ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে, গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে মার্চে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নামলেও এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ৫-৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

সফরকালে আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাত, থিঙ্কট্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও মতবিনিময় হয়েছে।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা আইএমএফের শর্ত পূরণে বাস্তবধর্মী অগ্রগতি তুলে ধরেছেন। জুনের মধ্যে সংস্কারে নির্ধারিত অগ্রগতি দেখাতে পারলে কিস্তি ছাড়ে কোনো বাধা থাকবে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads