হোয়াইট হাউসে ফেরার দিন গুণছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে উদ্বেগ আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মনে।
থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।
তারা বলছেন, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম প্রশাসন যে অভিযান চালাবে সে ব্যাপারে তাদের সন্দেহ নেই। বিশেষকরে, স্টিফেন মিলার ও টম হোম্যানের মতো কট্টরপন্থীদের ট্রাম্প প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পাওয়া সে শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
“এবার পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। রাজনৈতিক নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।,” এমনটি বলছেন অভিবাসী অধিকার সংস্থার আল ওট্রো লাদো’র পরিচালক এরিকা পিনহেইরো।
তার মতে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সময় ক্ষেপণের জন্য আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে স্পষ্ট যে, তার প্রশাসন বহিষ্কার অভিযান এবং জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের মতো কঠিন পদক্ষেপ নিতে অনড়।
বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বক্তৃতায় ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টাদের প্রতিশ্রুতি থেকে এটি অনুমেয় মার্কিন অভিবাসন নীতিকে তারা ঢেলে সাজাতে চান।
যদিও অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার ও জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সেটি হবে অভিবাসীদের জন্য চরম আঘাত।
সঞ্জীব চ্যাটার্জি, যিনি দু’বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে। অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই শিশুর জনক মিস্টার চ্যাটার্জির সঙ্গে একই ফ্লাইটে বাংলাদেশ ছাড়েন তার সহধর্মীনিও।
“অভিবাসীদের একটি বড় সংখ্যা জেনেশুনেই এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন। এখানে আমি এখনও অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। যতটুকু বুঝতে পেরেছি গতবার ট্রাম্প প্রশাসন ছিল ব্যবসাবান্ধব। অভিবাসন নীতি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে এখনও ট্রাম্পকে নিয়ে আশাবাদী মানুষই বেশি,” বলেন চ্যাটার্জি।
মিস্টার চ্যাটার্জি টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় যুক্ত আছেন। বাচ্চাদেরও ভর্তি করিয়েছেন স্কুলে।
তিনি আরও জানান, নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া অনেক বাংলাদেশি বেশ উদ্বিগ্ন। তারা বছরের পর বছর বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুত পথে হাঁটলে হয়তো তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার পরিণতি সুখকর হবে না।
অবৈধদের অপসারণে ইতোমধ্যে ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
“এবার ট্রাম্প অনেক বেশি পরিণত,” বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মার্কিন অভিবাসন এবং সীমান্ত নীতির সহযোগী পরিচালক ভিকি গাউবেকা। “বহিষ্কার অভিযান হয়তো প্রথম দিন থেকেই শুরু হবে।”
মানবাধিকার কর্মীরা সীমান্তে মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর নজরদারির আশঙ্কা করছেন। অ্যারিজোনায় কাজ করা ডোরা রদ্রিগেজ বলেন, “মানবিক সহায়তা অপরাধ নয়। কিন্তু তারা চাইলে এটিকে অপরাধ হিসেবে দেখাতে পারে।”
টেক্সাসে সাম্প্রতিক মামলা এবং আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধের প্রচেষ্টাগুলো ভবিষ্যতের সংকটের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন অধিকার কর্মীরা।
অবৈধ অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। মানবাধিকার কর্মীরা তাদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানার পরামর্শ দিচ্ছেন।
“আপনার অধিকার জানুন। কেউ গ্রেপ্তার হলে কী করতে হবে তা শিখুন,” বলছেন রদ্রিগেজ।
মেক্সিকোর তিজুয়ানার কাসা ডেল মাইগ্রান্তে আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার প্যাট মারফি জানিয়েছেন, “বহিষ্কার বাড়লে চাপ আরও বাড়বে। সবাই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চায়, কিন্তু কেউ পারে, কেউ পারে না।”
যদিও চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে, তবে নো মোর ডেথসের মতো সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।
আল জাজিরা অবলম্বনে