শতাধিক ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে অমৃতসরে অবতরণকারী মার্কিন সামরিক বিমানের দিকে তাকিয়ে আছেন এক নারী। ছবি: রয়টার্স।
ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে অমৃতসরে অবতরণকারী মার্কিন সামরিক বিমানের দিকে তাকিয়ে আছেন এক নারী। ছবি: রয়টার্স।

সব ঠিকঠাক থাকলে ১৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এর মধ্যেই অন্তত ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে সামরিক বিমানে করে ফেরত পাঠিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

বুধবার বিকালে এসব ভারতীয়দের বহনকারী বিমানটি পৌঁছায় বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের কঠোর অবস্থানের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে এই ভারতীয়দের ফেরত যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো হয় বলে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কর্মকর্তারা জানান।

মার্কিন সি-সেভেনটিন সামরিক বিমানে করে ফেরত আসা ভারতীয়দের বেশিরভাগই গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা।

বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে মার্কিন সামরিক বিমানটি পাঞ্জাবের অমৃতসারে অবতরণ করে বলে পাঞ্জাবের কর্মকর্তারা জানান।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য সামরিক বিমান পরিচালনা শুরুর পর এটাই ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইট।

ফেরত পাঠানো এসব ভারতীয়দের পরিবার ও বন্ধুরা সিএনএনকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছুতে এদের কঠিন পরিস্থিতিরি মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আসার অল্পদিনের মধ্যেই এদের আবার ফেরত পাঠানো হলো।

ফেরত আসা ভারতীয়দের একজন আকাশদীপ সিং। ২৩ বছর বয়স বয়সী আকাশদীপ সাত মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

আসতে ৬০ হাজার ডলার খরচ হয়েছে যা জোগাতে বাবার দুই তৃতীয়াংশ জমি বিক্রি করে দিতে হয় বলে জানান আকাশের চাচাতো ভাই মানরিয়াসাত সিং।

আকাশদীপ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর পরই আটক হন এবং তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

মানরিয়াসাত বলেন, তার বাবা-মা খুশি যে তাকে ১০ বছর কারাগারে না কাটিয়ে ফেরত দিয়েছে। অন্তত বেঁচে তো আছে।

এ ঘটনা শুধু আকাশদীপের একার নয়। গত চার বছরে ভারতীয়দের অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার হার বেড়েছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ২৭; ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৯১৭ জনে।

ফেরত পাঠানো ভারতীয়দের একজন হরবিন্দর সিং। তার স্ত্রী কুলজিন্দর কৌর বলেন, গত বছর এপ্রিলে উন্নত জীবনের আশায় যুত্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন ৪০ বছর বয়সী হরবিন্দর।

এক ট্রাভেল এজেন্ট তাকে ১৫ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ৪৫ হাজার ডলার বা ৪০ লাখ রুপির বেশি নেন বলে জানান তিনি।

কুলজিন্দর বলেন, “সে একবার সেখানে সব গুছিয়ে নেওয়ার পর আমাদেরও নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তিনি কী ভয়াবহতার মধ্যে দিয়ে গেছেন আমরা জানতেও পারিনি।

পাঞ্জাব থেকে যাওয়ার পর ১০ মাস ধরে তিনি ট্রাক, নৌকা, ভ্যান কত কিছুতে করে কত দেশ পেরিয়ে মেক্সিকো থেকে গত ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করে বলে জানান তিনি।

কুলজিন্দর আরও বলেন, মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে পানি কেনার সময় সেনাবাহিনীর তাকে ধরে আটক শিবিরে নিয়ে যায়। সেখানে আইন প্রক্রিয়া শেষে দুইদিন পর বলা হয় ট্রাম্প তোমাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।

“তাকে হাতকড়া পরিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে সামরিক বিমানে তোলা হয়। বিমানে পানি পান কিংবা শৌচাগারে পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়নি।”

পাঞ্জাবের গ্রাম্য নেতা লখবীর সিং বলেন, “বেকারত্বের কারণে যুবকরা এলাকা ছেড়ে যেতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এরা একটি ভালো জীবন চায়।”

এসব অবৈধ অভিবাসীদের ভারত সরকার ফিরিয়ে নিতে সম্মত থাকলেও স্থানীয় নেতারা বিষয়টি মূল থেকে সুরাহা চান।

পাঞ্জাবের অনাবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রী কুলদীপ সিং ধালিওয়াল ফেরত পাঠানো ভারতীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেন, “আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি যেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বসেন এবং যা ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে তার একটি সমাধান খুঁজে বের করেন।”

আরও পড়ুন