ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের নেপথ্যে কী?

বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানা।
বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানা।

বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিল ভারত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঝড়ের পর প্রতিবেশী দেশের নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা হয়েই এল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেওয়া এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত- ভারতের সংবাদপত্রগুলো এই ধারণাই দিচ্ছে।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যে অন্য সুর পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম যখন নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলছে, তখন মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলছেন, নেপাল কিংবা ভুটানে পণ্যের চালান পাঠাতে বাধা নেই।

তাহলে এই সিদ্ধান্তে কী আটকাচ্ছে? উত্তরে প্রথমেই আসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে পোশাক রপ্তানি এখন আর করা যাবে না।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য এই সুবিধা বন্ধের দাবি অনেক দিন ধরেই করে আসছিল ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি এইপিসি।

এতদিন সুবিধা দিয়ে আসার পর এখন তা বাতিল হলো কেন? এর সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধে বাংলাদেশ চেয়ে ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলার এই তো সুযোগ।

নয়া দিল্লির সিদ্ধান্ত যদি রাজনৈতিক হয়েও থাকে, তাতেও নিজেদের তৈরি পোশাকের প্রতিদ্বন্দ্বীকেও কাবু করে ভারত দৃশ্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে।

বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হানও ধরেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক লিখেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের রেশে বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা তারই প্রতিক্রিয়া।

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করা নিয়ে প্রতিবেদনে রয়টার্সও লিখেছে, এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আরও জটিলতায় পড়ল। 

ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যে ৫২ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর এমনিতেই পোশাক শিল্প নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে ঢাকা। তার মধ্যে এখন ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ পোশাক খাত আরও গাড্ডায় ফেলতে যাচ্ছে।

আর বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বলতে আছেই এই তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮০ ভাগের বেশিই আসে ৈতরি পোশাক থেকে। ফলে ডলার সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশের জন্য পোশাক শিল্পের বিপদ মানে দেশের জন্য বড় বিপদ।       

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধে যা জানাল ভারত

ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইন্ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) মঙ্গলবার এক সার্কুলারে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়।

তাতে বলা হয়, ২০২০ সালে ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাটি বন্ধ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০২০ সালে এক সার্কুলারে বাংলাদেশ থেকে পণ্য ভারতের স্থল বন্দর হয়ে বিমানবন্দর ও সমুদ্র-নৌবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে বিশেষ করে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের চীন সফরে দেওয়া এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির এই পদক্ষেপ বলে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো শিরোনাম করে।

চীন সফরে গত ২৮ এপ্রিল বেইজিংয়ে ব্যবসায়ীদের এক সংলাপে বাংলাদেশ বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর সঙ্গে নিজ দেশের ভৌগলিকভাবে কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলেন ইউনূস। তখন তিনি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার কথা বলেছিলেন, সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগরের ‘অভিভাবক’ হিসাবেও তুলে ধরেন।

একে তো কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন, তার মধ্যে স্পর্শকাতর ‘চিকেন নেক’ নিয়ে কথা বলা; তাও আবার বৈরী দেশ চীনে বসে! ভারতের রাজনীতিকদের মধ্য থেকে আসে তীব্র প্রতিক্রিয়া।

তারপর ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে গত ৪ এপ্রিল ইউনূস-মোদী বৈঠকেও বসেন। বাংলাদেশের উদ্যোগেই সেই বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে মোদী ‘পরিবেশ নষ্ট করে’ এমন কথাবার্তা না বলতে ইউনূসকে বলেছিলেন, এমন খবরও আসে।

সেই বৈঠকের পর সপ্তাহ না যেতেই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়া দিল্লি জানানোর পর তা ইউনূসের কথার জের বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু সিবিআইসি সার্কুলার জারির পরদিন বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ২০২০ সালে বর্ধিত করা হয়। এর ফলে গত পাঁচ বছরে ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে উল্লেখযোগ্য জট দেখা দেয়। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পণ্য আটকে থাকছে, বিলম্ব হচ্ছে এবং সরবরাহ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

এ কারণেই ভারতের মধ্য দিয়ে বিমানবন্দর ও বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে বলে জানান জয়সওয়াল। তবে তিনি একই সঙ্গে বলেন, “এতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

নেপাল ও ‍ভুটানে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে না বললেই চলে। ফলে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ভারতের একটি পোশাক কারখানা।

তবে ভারতের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের পরিপন্থি। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৯৯৪ সালের সাধারণ শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্যের অবাধ ট্রানজিটের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য সব সদস্য রাষ্ট্র।

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে যে প্রভাব

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, ভারতের বিকল্প তাদের কাছে থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।

“সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের একটি বিকল্প কমে গেল,” অনলাইন নিউজ পোর্টাল সকাল সন্ধ্যাকে বলছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফারুক হাসান।

নানা কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য আকাশ পথে রপ্তানি করেন। ট্রান্সশিপমেন্ট ‍সুবিধা নিয়ে ভারতের বিমানবন্দর দিয়ে তা রপ্তানি করলে তাদের লাভ হয়।

ফারুক বলেন, তিনি বলেন, “আমাদের দেশ থেকে পৃথিবীর অনেক দেশেই সরাসরি ফ্লাইট নেই। কিন্তু ভারতের সাথে আছে। আমাদের খুব কাছে হওয়ায় ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধায় আমরা ভারতীয় ফ্লাইটের সুযোগ নিতে পারছিলাম।”

এতে খরচ কম হত বলেও হিসাব দেখান বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে কোনো ফ্লাইটের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্য পাঠাতে প্রতি কেজিতে সাড়ে ৬ ডলার করে দিতে হয়। আবার সময়মতো ফ্লাইটও পাওয়া যায় না। কিন্তু ভারত থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট করলে প্রতি কেজি রপ্তানি পণ্যের জন্য মাত্র আড়াই ডলার দিতে হয়। কলকাতা থেকে যে পণ্য আড়াই ডলারে পাঠানো যায়, একই পণ্য কেন বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৬ ডলার নেওয়া হয়?”

ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় বিকল্প হিসেবে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুর রয়েছে জানিয়েই ফারুক বলেন, “সেক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাবে।”

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও বিশ্ববাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গার্মেন্টসের যারা রপ্তানিকারক আছেন, অনেক সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রেতা দেশগুলোর কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য তারা ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন। এখন তারা সেটা পারবেন না। ফলে বাংলাদেশ থেকেই পণ্য পাঠাতে হবে।”

তবে বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা খুব বেশি ব্যবহার না করায় দেশের অর্থনীতিতে এর বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন না।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের একজন রপ্তানিকারক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে গার্মেন্টস পণ্যের ‘সামান্য কিছু অংশ’ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়।

ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভারত সরকারের ২০২৩ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, ওই বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে মাত্র ৫ হাজার কিলোগ্রামের মতো বাংলাদেশি পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি হয়েছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি অনুবিভাগ) মো. আবদুর রহিম খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি রপ্তানি খাতের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, ভারতের সঙ্গে আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে অন্তত পোশাক খাতের খুব বেশি ক্ষতি হবে না।

“এরপরও আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। কেন তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কী সমস্যা। কথা বলে আমরা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করব।”

পোশাক শিল্পে কী প্রতিযোগিতা?

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য মানেই যে তৈরি পোশাক, তা পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই ধরা পড়ে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন দেশে মোট ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ (৩২.৯৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

এই আয়ের ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। আট মাসে ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

এই তৈরি পোশাকের বড় বাজার আবার যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই বাজারে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ভারত।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ হাজার ৯২৬ কোটি (৭৯.২৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছিল।

সেই সরবরাহে শীর্ষে ছিল চীন, দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। চীন গত বছর ১ হাজার ৬৫১ কোটি (১৬.৫১ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশ থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি হওয়া প্রতি বর্গমিটার পোশাকের দাম ছিল ৩ দশমিক ১০ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের পরের স্থানেই রয়েছে ভারত। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলারের। তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর শতাধিক দেশের পর যে হারে শুল্ক চড়িয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে ভারত।

বাংলাদেশের পণ্যে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। আগের ১৫ শতাংশ মিলিয়ে এখন শুল্ক দাঁড়াল ৫২ শতাংশে।

অন্যদিকে ভারতের ওপর নতুন করে ২৬ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। আগের আড়াই শতাংশ যোগ করলে মোট মিলিয়ে তা দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক।

চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ পোশাক রপ্তানিকারক অন্য দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য পাঠাতে ভারতের শুল্ক কম বলে তৈরি পোশাকের বাজার বাড়ানোর ক্ষেত্রে তারাই রয়েছে সুবিধাজনক স্থানে।

এজন্য ভারত সরকার দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছে। এরপর এখন বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় সেটাও ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকদের সুবিধ দেবে।

২০২০ সালে বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাওয়ার পর থেকেই ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি (এইপিসি) তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এখন তাদের চাওয়া পূরণ হলো।

এইপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখড়ি বলেন, টেক্সটাইল রপ্তানিতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় এখন ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোতে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের জন্য বেশি জায়গা তৈরি হবে।

এই বিষয়টি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তারা দেখতে পাচ্ছেন, ভারতের এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখলে বাংলাদেশকে টপকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত

আরও পড়ুন