তিব্বত মালভূমির পূর্বদিকের ইয়ারলুং জাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে চীনকে ‘সতর্কবার্তা’ দিয়েছে ভারত।
চীন ভূখণ্ডে ‘ইয়ালুং জাংপো’ নামে প্রবাহিত হলেও ভারতের অরুণাচল ও আসাম রাজ্য দিয়ে ‘ব্রহ্মপুত্র’ নামে বাংলাদেশে ঢুকেছে এই নদ।
বেইজিংয়ের এই মেগা প্রকল্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারত জানায়, নয়াদিল্লি তার ‘স্বার্থ রক্ষা করবে’।
গত সপ্তাহে চীন ঘোষণা দেয় যে তিব্বতে তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে, যা তাদের ‘থ্রি গর্জেস’ বাঁধের চেয়েও বড় হতে যাচ্ছে। তিব্বতের পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল হিমালয় অঞ্চলে এই বাঁধ নির্মাণ করা হবে এই বাঁধ, যা ভারতের সীমান্তের খুব কাছে।
মধ্য চীনে নির্মিত থ্রি গর্জেস বাঁধটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি ০.০৬ সেকেন্ড কমিয়ে দিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
ভারত বলেছে, পরিবশেগত প্রভাব ছাড়াও উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে ওই অঞ্চলটি ভূতাত্ত্বিকভাবে দুর্বল।
একইসঙ্গে বেইজিংয়ের কাছে পুরো পরিকল্পনার সবিস্তার জানতে চেয়েছে দেশটি। নদীর পানির ওপর তাদের অধিকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছে নয়াদিল্লী।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নয়াদিল্লী সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে; প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, “আমাদের নজরদারি অব্যাহত থাকবে এবং স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
চীনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তা ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ ও অববাহিকার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যার ফলে তীব্র খরা ও এবং বন্যা হতে পারে। যা ভারতের নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করা লাখ লাখ বা কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করবে।
জয়সোয়াল বলেন, ব্রহ্মপুত্র প্রবাহের উপরের দিকে তাদের এ প্রকল্পের জন্য নিচের দেশগুলোর যেন স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে বেইজিংকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতের আসাম ও অরুণাচল রাজ্যে এ বাঁধের প্রভাব বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জয়সোয়াল বলেন, “নিম্ন প্রবাহের দেশ হিসেবে নদীর পানির ব্যবহারের অধিকার থাকায় চীনের ভূখণ্ডে নদীর উপর মেগা প্রকল্পগুলো সম্পর্কে আমাদের মতামত এবং উদ্বেগ প্রতিনিয়ত বিশেষজ্ঞ স্তর এবং কূটনৈতিক চ্যানেলগুলির মাধ্যমে তাদের জানিয়েছি।”
এছাড়া নিম্নাঞ্চলীয় দেশগুলির সঙ্গে প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার কথাও জানানো হয়েছে বলে জানান ভারতের মুখপাত্র।
চীনের এই হাইড্রোইলেকট্রিক প্রকল্পটির ভূরাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। প্রকল্পটি ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
আর এই উত্তেজনা দুই দেশের মধ্যে ‘জলযুদ্ধের’ সূচনা ঘটাতে পারে বলে ২০২২ সালে ভূরাজনৈতিক এবং বৈশ্বিক কৌশলগত পরামর্শদাতা জিনেভিভ ডনেলন-মে আশঙ্কা করেছিলেন।
প্রকল্প সম্পর্কে যা জানা যায়
বাঁধটি নির্মিত হলে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে এটি। তিব্বত মালভূমির পূর্ব দিকে ইয়ারলুং জংবো (সাংপো) বা ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্ন প্রবাহে নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে চীন।
চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ এ প্রকল্পে বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যা নির্মাণে প্রায় ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। বর্তমানে চীনের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ থ্রি গর্জেসের তিনগুণ হবে এটি।
থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের সময় প্রায় ১৪ লাখ বাস্তুহারা লোককে পুনর্বাসন করতে হয়েছিল বলে জানালেও নতুন এ বাঁধ নির্মাণে তিব্বতের ঠিক কত লোককে সরিয়ে নিতে হবে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি চীন।
এ প্রকল্পের ফলে ওই পরিবেশগত ভারসাম্য পরিবর্তি হবে যার প্রভাব ভারত ও তিব্বত ছাড়াও বাংলাদেশের ওপরও পড়বে। বাঁধের কারণে নদীর স্রোত পরিবর্তন হবে যা কৃষি ও পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলবে।
সূত্র: এনডিটিভি