বিএনপি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু নয়: সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয়

সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

বাংলাদেশে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। তবে এবারই প্রথম আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। নির্বাহী আদেশে দলটির কার্যক্রমে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচন কমিশনেও স্থগিত করা হয়েছে নিবন্ধন।

এরকম অবস্থার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ভোটের মাঠে চলছে নানা সমীকরণ আর হিসেব-নিকেশ। আওয়ামী লীগের কোটি কোটি ভোট কার বাক্সে যাবে?

তবে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, এ নির্বাচন হবে “সম্পূর্ণভাবে কারচুপিপূর্ণ”।

তিনি দাবি করেছেন, এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তান এবং মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শনিবার রাতে ভারতের নিউজ এইটিনকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারটি পোর্টালে প্রকাশ করা হয়, যেখানে সজীব ওয়াজেদ জামায়াত ও বিএনপি’র বিষয়ে তার মায়ের দলের অবস্থানও পরিষ্কার করেছেন।

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এটি একটি সাজানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যেখানে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি গণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ উপহাস।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তার বিরুদ্ধে শত শত মামলা হলে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এছাড়াও দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনাসহ তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা এবং ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কী করবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের সমর্থকেরা ইতোমধ্যে ছোট ছোট প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেছেন। আমরা আরও বড় বিক্ষোভও আয়োজন করব; রাজনৈতিকভাবেই এর মোকাবিলা করব।”

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ষোল মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাকে কোনঠাসা করে রেখেছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার; তিনি নির্বাচনের পর পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন।

রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, “এটি খুবই স্বাভাবিক। নির্বাচন হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।”

এর পরের প্রশ্নেই সজীব ওয়াজেদের কাছে জানতে চাওয়া হয়- তাহলে কি মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্ট হতে চাইছেন?

প্রতিক্রিয়ায় ‘না’ সূচক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমার ধারণা, ইউনূস বাংলাদেশে থাকা তার ব্যবসাগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করছেন এবং আজারবাইজানের মাধ্যমে তার অর্থ বাইরে স্থানান্তর করছেন।

“তিনি দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন এবং ফ্রান্সে বসবাস করবেন, যেখানে তার একটি বাড়ি আছে।”

সম্প্রতি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের মেয়ে ব্যক্তিগত সফরে ঢাকায় এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে পুরো প্রক্রিয়ায় ‘বিদেশি শক্তি’ জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- আপনি কি মনে করেন বিদেশি শক্তি এতে জড়িত?

“পাকিস্তান অবশ্যই জড়িত। আজারবাইজানের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুতর। ইউনূস তার অর্থ পাচার করছেন,” সজীব ওয়াজেদ জয়ের জবাব।

আওয়ামী লীগ এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করে আসছেন জয়। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ বড় দুটি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে, দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তনে বিদেশ থেকে একটা ‘খেলা’ চলছে।

বড় দুটি দল বলতে তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কথা বুঝিয়েছেন। তবে সেই খেলা কারা খেলছে, তা তখন বলেননি তিনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপদেষ্টা বলেন, “যদি এমন একটি কারচুপি করা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী–নির্ভর একটি ইসলামপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”

তার কাছে রাখা সর্বশেষ প্রশ্নটি ছিল- আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শত্রু কে- জামায়াত নাকি বিএনপি?

“জামায়াত, নিঃসন্দেহে,” সজীব ওয়াজেদ জয়ের উত্তর।

তিনি বলেন, “বিএনপি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু নয়। জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকার করে না এবং দেশটিকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।”

আরও পড়ুন