‘যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকিদাতা’ রাষ্ট্র বলে সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণুবিষয়ক আলোচনা প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
পারমাণবিক চুক্তিতে রাজি না হলে তেহরানকে সামরিক পদক্ষেপের মুখোমুখি করা হতে পারে- ট্রাম্পের এমন চিঠির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় শনিবার এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে শুক্রবার তেহরানকে পারমাণবিক চুক্তি বিষয়ে বসতে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠান ট্রাম্প।
এর জবাবে খামেনি বলেন, জোর করে আলোচনায় আনতে চাওয়া ‘হুমকিদাতা’ দেশের সঙ্গে ইরান কোনো আলোচনায় যাবে না।
জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে এমন এক চুক্তিতে যেতে চান যাতে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির আর এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারে।
ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, তিনি ইরানকে আলোচনার সুযোগ দিয়েছেন; না হলে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি হামলার ঝুঁকিতে পড়বে।
তিনি ফক্স বিজনেসকে বলেন, “আমি তাদের চিঠি লিখেছি। যাতে বলেছি, আশা করি তোমরা আলোচনায় বসবে; আর যদি আমাদের সামরিক শক্তি দেখাতে হয় সেটা তোমাদের জন্য ভয়ঙ্কর হবে।
“ইরানকে সামলানোর দুটি উপায় রয়েছে; সামরিকভাবে বা চুক্তির মাধ্যমে। আমি চুক্তি করতে চাই; ইরানে হামলা নয়।”
ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার রমজান উপলক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্পের এ চিঠির প্রতিক্রিয়া জানান আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।
তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে বলেন, “কিছু নিপীড়ক রাষ্ট্র আলোচনার জন্য চাপ দিচ্ছে।”
ইরানি ওই গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে খামেনি বলেন, “সমস্যা সমাধান তাদের উদ্দেশ্য নয়; তাদের উদ্দেশ্য আধিপত্য বিস্তার।
“বিষয়টি শুধু পারমাণবিক নয়। তারা অন্যকিছু প্রত্যাশা করছে যা ইরান কোনোদিনও পূরণ করবে না।”
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে জাতিসংঘের পারমাণবিক তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার প্রধান জানান, ইরান উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পরিমাণে উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা ‘খুব উদ্বেগজনক’।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ইরান তার ইউরেনিয়ামের মজুদ ৬০% পরিমাণে সমৃদ্ধ করছে; যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধতার কাছাকাছি।
ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করা দাবি করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে।
নিষেধাজ্ঞা শিথিলের শর্তে ২০১৫ সালে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করে।
কিন্তু ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চুক্তি ভঙ্গের পরবর্তী বছরগুলিতে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ত্বরান্বিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে তাদের কাছে অস্ত্র গ্রেডের কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে বলেও দাবি এই বিশেষজ্ঞদের।