ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার ‘ঘনিষ্টতা’, সমুদ্রপথে যোগাযোগ স্থাপন, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা এবং সর্বশেষ এক হিন্দু ধর্মীয় নেতার গ্রেপ্তার ঘিরে সহিংসতায় উদ্বিগ্ন দিল্লি।
দেশটির ইকনমিক টাইমস বুধবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে লিখেছে, বাংলাদেশে ইসকনের পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর সৃষ্ট গোলযোগকে কেন্দ্র করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়কে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।
ইসকনকে মৌলবাদী সংগঠন আখ্যায়িত করে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করার দাবিতে পিটিশন জমা পড়েছে বাংলাদেশ হাইকোর্টে।
দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, সরকার ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসকনের ধর্মীয় গুরুকে গ্রেপ্তারের সমালোচনার পর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ওই ঘটনাকে তাদের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
ইকনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে হিন্দুদের উপর ক্রমবর্ধমান হামলার সংবাদকে ‘সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত’ বলে দাবি করেছিলেন।
এর কয়দিনের মাথায় হিন্দুদের উপর চলমান সহিংসতার ঘটনা দৃশ্যত ‘পশ্চাদপসরণশীল’ ও ‘নৃশংস রাষ্ট্রে’ পরিণত হওয়ার লক্ষণ বহন করে বলে প্রতিবেদনে এসেছে।
আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বিক্ষোভকারীরা তার প্রয়াত পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি গুড়িয়ে দেয়, যিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
সব মিলিয়ে, ইউনূসের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে চাইছে বলেই ভারতের ধারণা।
দুই সপ্তাহ আগে করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো জাহাজ নোঙরকে ৫৩ বছরের দুরত্ব ঘোচানোর সংকেত হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ‘শিপিং রুট’ প্রতিষ্ঠাকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
“এই উদ্যোগ বিদ্যমান বাণিজ্য প্রবাহকে ত্বরান্বিত করবে এবং ছোট ব্যবসায়ী থেকে বড় রপ্তানিকারকদের উভয় পক্ষের ব্যবসার জন্য নতুন যুগের সূচনা করবে,” যোগ করেন তিনি।
সেপ্টেম্বরে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে ‘সাইডলাইনে’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে দেখা করেন ইউনূস। সেসময় সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানান তিনি।
পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, তার দেশ পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক চায় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের বাহিনীর নৃশংসতার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইলে এটি সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন।
স্পষ্টতই, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের গভীর সম্পর্ক ভারতের জন্য নিরাপত্তা ও কৌশলগত দিক থেকে উদ্বেগের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক সম্পর্ক যতোটানা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহন করে তার চেয়ে বেশি ভূ-রাজনৈতিক। কারণ করাচি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ‘শিপিং রুট’ অন্যান্য বিকল্পের তুলনায় ব্যয়বহুল এবং বেশি সময়সাপেক্ষ।
সমুদ্র পথে যোগাযোগ পাকিস্তানকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি চ্যানেল তৈরি হবে। এই দুটোই ভারতের জন্য ‘চ্যালেঞ্জিং’।