‘শিশুদের’ ভোটার করার পথেই হাঁটছে ইসি? চাইছে জামায়াতও

শিশু-কিশোরদের ভোটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জামায়াতেরও। ছবি: দ্য সান ২৪
শিশু-কিশোরদের ভোটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জামায়াতেরও। ছবি: দ্য সান ২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে আনার পক্ষে মত দেওয়ার পর দৃশ্যত সে পথেই হাঁটছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

অন্তত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে স্পষ্ট যে তারাও ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভোটার করার বিষয়ে ‘আগ্রহী’।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ভোটার তালিকায় ‘যুবকদের’ যুক্ত করতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার যেদিন তার এই মন্তব্য প্রকাশ করলেন একই দিনে কাছাকাছি মন্তব্য এসেছে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমানের কাছ থেকেও।

এর আগে শুক্রবার এক ভাষণে ইউনূস তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার বানানোর পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেন, যদিও দেশের সংবিধান ও আইনে তার এই মত বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।

ইউনূসের ‘তরুণ’, সিইসির ‘যুবক’ এবং জামায়াত আমীরের ‘শিশু-কিশোররা’ কার্যত একই বয়সসীমার; ১৮ বছরের কম বয়সী। যদি তাদের সত্যিই ভোটে আনতে হয় সেক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, শিশু আইনেও আনতে হবে পরিবর্তন।

সারাবিশ্বে ১৯৫টি দেশের মধ্যে অস্ট্রিয়া, মাল্টা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কিউবা ও ইকুয়েডরে ১৮ বছরের কম বয়সীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।   

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী সবাইকে বোঝানো হয়েছে। আর বাংলাদেশ শিশু আইন, ২০১৩ স্পষ্টভাবে ১৮ বছরের নিচে সবাইকে শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

ইউনূস বলেছিলেন, “তরুণরা সংখ্যায় বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিৎ।”

অন্তর্বর্তী প্রধানের ওই অবস্থানের একদিন পর সিইসির ভাবনা প্রকাশ পেলো তার বক্তব্যে।

সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, “সংস্কার কমিশন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছে। কারণ তারা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শিগগির সরকারে কাছে দিয়ে দেবেন। আমাদের কোনো সুপারিশ বা বক্তব্য আছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন তারা। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে যেটা ফিল করছি সেগুলো জানিয়েছি।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “ডেলিমেটেশন সংক্রান্ত কিছু আছে এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কিছু আছে। এছাড়া যেগুলো নির্বাচনের জন্য গুরুত্ব সেগুলোর বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ থাকবে। তারা সুপারিশ করুক আর না করুক আমাদের তা অ্যাড্রেস করতে হবে। তা না হলে আমরা ডেলিমেটেশনকে অ্যাড্রেস করতে পারছি না।”

তরুণদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, “ভোটার তালিকায় যেহেতু যুবকদের আনতে চাই; সেহেতু এখানেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা তাদের বিষয়গুলো জানতে চাইছি। আমাদের কি প্রয়োজন সেগুলো বলেছি।’

অন্যদিকে, জামায়াত নেতা শফিকুর নীলফামারীতে এক অনুষ্ঠানে তাদের এই ইচ্ছার বিরোধিতা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শিশু-কিশোর ও যুবকরাই আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তাই তাদেরকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিয়ে আমাদের দায় শোধ করতে পারি। এ ব্যাপারে যারা বিরোধিতা করছে তাদেরকে শোধরানোর আহ্বান জানাই।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শিশু আইনের সংজ্ঞায় বয়স কমিয়ে আনার একটি উদ্যোগ নিয়েছিলো ঠিকই তবে সেটি ‘কিশোর গ্যাং’র দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় প্রেক্ষিতে। তাদেরও প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো বিচারের আওতায় আনার জন্য।

তবে শিশু অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন মহলের বিরোধিতায় সেই উদ্যোগ হালে পানি পায়নি।

বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক সেসময় বলেছিলেন, শিশুর বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত হবে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বিবেচনা করা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

সিইসির ভাষায় ‘যুবক’ ভোটারের সংখ্যা কত হতে পারে তার একটি ধারণা পাওয়া যায় ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা থেকে, কারণ তাদের বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

এবছর মোট ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়, যাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী, ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ জন দাখিল পরীক্ষার্থী এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষার্থী ছিলেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের চাওয়া পূরণ করা হলে এই ২০ লাখ নতুন ভোটার যোগ হবে তালিকায়, যারা আইন অনুযায়ী শিশু হিসেবেই স্বীকৃত।

রোববার সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল জানিয়েছেন, নির্বাচনী সংস্কার বিষয়ক প্রতিবেদন ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সম্ভব না হলে ৩ জানুয়ারি সেটি জমা পড়বে।

এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিবেদন:

১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করার পক্ষে ইউনূস, তবে বাধা আছে আইনে

আরও পড়ুন