কানাডা-মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ কি বেধেই গেল

mexico-canada-usa-flag

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার তিনটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ চীন, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কানাডা ও মেক্সিকোকে ২৫ শতাংশ এবং চীনকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।

চীন এখনও সেভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও ইতোমধ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পাল্টা হিসেবে কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর একই হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকোর বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিবেশী দুই দেশ– কানাডা ও মেক্সিকোর পাশাপাশি চীনের পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরপর দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই গত শুক্রবার শুল্ক আরোপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান এবং শনিবার এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশে সই করেন।

ট্রাম্প বলছেন, বেশ কিছু কারণে দেশগুলোর ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, যার শীর্ষে রয়েছে অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের মতো সমস্যা। এ বিষয়ে শনিবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় চীন, মেক্সিকো ও কানাডাকে জবাবদিহি করতে শুল্ক আরোপ অপরিহার্য।”

এদিকে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, অপরাধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মেক্সিকো সরকারের “অসহনীয় জোট” রয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা “মিথ্যা”। তিনি উল্টো মেক্সিকোতে অবৈধ অস্ত্র পাচার বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

একইসঙ্গে শেইনবাউম এও বলেছেন, শুল্ক আরোপ করে সমস্যার সমাধান হয় না, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। তবে মেক্সিকোও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছে।

অন্যদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তার দেশও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাব দেবে। তিনি বলেন, “আমরা এই পরিস্থিতি চাইনি। কিন্তু কানাডীয়দের পক্ষে দাঁড়াতে আমরা পিছু হটব না।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যে শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে শনিবার সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি/হোয়াইট হাউস

তিনি জানান, কানাডা ১৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমেরিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে। এর মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর মঙ্গলবার থেকে এবং বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর ২১ দিনের মধ্যে শুল্ক কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রুডো।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, আমেরিকান বিয়ার, ওয়াইন, বুরবন, ফল ও ফলের রস, শাকসবজি, পারফিউম, পোশাক ও জুতা, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, স্পোর্টস গুডস এবং আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন পণ্য এই শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হবে। এছাড়াও কাঠ ও প্লাস্টিকের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে।

বাণিজ্য যুদ্ধ কি বেধেই যাচ্ছে

কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে একই হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা দেশগুলোকে একটি বাণিজ্য যুদ্ধে দিতে ধাবিত করছে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরই মধ্যে মেক্সিকো ও কানাডার পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তারা (মেক্সিকো-কানাডা) প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করলে তাদের ওপর আরোপিত শুল্কের হার আরও বাড়ানো হবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা আরও উসকে দিচ্ছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান লানজা বলছে, বাণিজ্য যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়। মূলত আলোচনায় বসতে দেশগুলোতে বাধ্য করতেই তারা এই পথে হাঁটছেন।

বিবিসি রেডিও ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বাণিজ্য যুদ্ধ উসকে দিতে নয়, এটি আলোচনার জন্য এটি একটি হুমকি।“

এই লড়াইয়ে কে জিতবে, হারবে কারা

চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশগুলো পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে একই হারে শুল্ক আরোপ করলে তাতে শেষ পর্যন্ত কার লাভ হবে, আর কে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে– এখন সামনে আসছে সেই প্রশ্নও।

সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানি পণ্যের ৪০ শতাংশ আসে চীন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে। ফলে এই দেশগুলোর পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের অর্থ হচ্ছে, এসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে বাজারে। দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে সেক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হবে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কানাডা ও চীন যদি ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়েই পড়ে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র হিসেবে কারা লাভবান হবে বা কে শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে জয়ী হবে সে সম্পর্কে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

তবে একটি বিষয়ে তারা একমত যে, সম্ভাব্য এই বাণিজ্য যুদ্ধে যেই বিজয়ী হোক না কেন, পরাজিত হবে একটি পক্ষই– আর তারা হচ্ছে দেশগুলোর ভোক্তারা। কারণ উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের দামে যে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেবে, তার চাপ দিনশেষে ভোক্তার ওপরই পড়বে।

বিবিসি ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads