যু্ক্তরাজ্যভিত্তিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (জেএলআর) যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গাড়ি রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
গাড়ি আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এলো বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত একাধিক বাণিজ্য নীতির একটি, যা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ গাড়ি শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।
জেএলআরের এক মুখপাত্র জানান, “নতুন বাণিজ্য শর্তাবলী মোকাবিলায় আমরা মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিচ্ছি, যার মধ্যে এপ্রিল মাসে গাড়ি সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখাও অন্তর্ভুক্ত।”
কোভেন্ট্রি ভিত্তিক এই গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জেএলআরের লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। যু্ক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অন্য যেকোনো পণ্যের চেয়ে বেশি গাড়ি রপ্তানি করা হয়। যু্ক্তরাজ্যের বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ১২ মাসে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন পাউন্ড।
৩ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি আমদানির ওপর প্রথম দফার শুল্ক কার্যকর হয়েছে। আগামী মাস থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপরও শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা অন্যান্য পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যুক্তরাজ্যের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও কিছু দেশের ওপর অনেক উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প।
নতুন বাণিজ্য নীতির প্রভাবে গত কয়েকদিনে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। শুক্রবার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের এফটিএসই ১০০ সূচক ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে, যা কোভিড মহামারির শুরুর পর সবচেয়ে বড় পতন। জার্মানি ও ফ্রান্সের শেয়ারবাজারেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্যবস্থা নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ানোর’ কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। শনিবার তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন, যা ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে তার ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম ধাপ।
ডাউনিং স্ট্রিট থেকে জানানো হয়েছে, কিয়ার স্টারমার ও ম্যাক্রোঁ একমত হয়েছেন যে, বাণিজ্যযুদ্ধ কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়, তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো বিকল্পই বাদ দেওয়া যাবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার স্টারমার সতর্ক করে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে এবং এর প্রভাব স্পষ্টভাবে যুক্তরাজ্যেও পড়বে।