প্লট বিতর্কে মুখ খুললেন জয়: বললেন ‘সবই অপপ্রচার’

Sajeeb Wazed

ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাগুলো ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি জানান, সঠিক ফরমে আবেদন এবং সব নিয়ম মেনে আবেদন করা হয়েছিল এবং রাজউক নিয়ম মেনে বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য এই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশে এখন সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ মন্তব্য করে জয় বলেন, ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে কেউ এসব অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারছে না।

শুক্রবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে তিনি লেখেন, “আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন, পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অপপ্রচারের অংশ।

তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। দুই মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় লেখেন, “আমাদের বিরুদ্ধে তিনটি কথিত নিয়মভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে: এক, আমরা নাকি নির্ধারিত ফরমে আবেদন করিনি; দুই, আমাদের নামে রাজউকের আওতায় জমি থাকার পরও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; তিন, আবেদনকারীদের তালিকায় নাকি আমাদের নাম ছিল না।”

“কিন্তু মূল বিষয়টা হলো, ১৯৬৯ সালের রাজউক (জমি বরাদ্দ) বিধিমালার ১৩(ক) ধারা অনুযায়ী — যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার চাইলে বিশেষ অবদানের জন্য (যেমন: সরকারি দায়িত্ব, জনসেবা বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবদান রাখা) ব্যক্তিদের জমি বরাদ্দ দিতে পারে। এছাড়াও, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং রাষ্ট্রীয় অবদান রাখা সরকারি কর্মকর্তাদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও ওই বিধিমালাতেই আছে।” বলেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি বলেন, “আমার পরিবারের সদস্যরা এই বিশেষ বিধানের আওতায় (১৩(ক)(১)(ক) এবং ১৩(ক)(১)(গ)) মন্ত্রী এবং শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে আবেদন করেছিলেন। এই বিধান অনুযায়ী, কারও নামে রাজউক এলাকায় অন্য জমি থাকলেও সেটা কোনো বাধা না। তাই এই অভিযোগ একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।”

জয় লেখেন, “আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম, যিনি তা যথাযথভাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ প্রেরণ করেন। সুতরাং, বলা হচ্ছে যে আমরা সঠিক ফরমে আবেদন করিনি—এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরপর গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় বিধি অনুযায়ী (অ্যালোকেশন অব বিজনেস ১৯৯৬) আবেদনগুলো অনুমোদন করে এবং রাজউককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে। রাজউক তা বরাদ্দ কমিটির সামনে উপস্থাপন করে, এবং নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।”

“প্রত্যেক ধাপে নিয়ম মেনে কাজ হয়েছে—যেটা এখনকার ইউনুস-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বা আদালতের মতো না। আমাদের জমিগুলো কিন্তু বিনামূল্যে দেওয়া হয়নি, বরং আমরা সরকার নির্ধারিত দামে কিনেছি। কিন্তু এখন ইউনুসের সময়কালে, দুদক একটা পুরোপুরি রাজনৈতিক হুমকির যন্ত্র হয়ে উঠেছে — আমার পরিবারকে হয়রানি আর বদনামের জন্য। ”

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় আরও লেখেন, “দুদকের চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন, যাকে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করেছিল, এখন এই অপারেশনের প্রধান। তার একমাত্র যোগ্যতা, তিনি বিএনপি-ঘনিষ্ঠ আমলা ছিলেন, খালেদা জিয়ার প্রাইভেট সেক্রেটারি ছিলেন। তাই দুদক থেকে নিরপেক্ষতা আশা করাই বোকামি “

প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে জয় লেখেন, “আদালত এই মামলাগুলো প্রথমেই খারিজ করে দিতে পারতো। কিন্তু ইউনুসের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিচার ব্যবস্থা, বিএনপি-জামাতপন্থী আইনজীবীদের প্রভাব, আর সহিংসতার ভয়—এই তিনের কারণে আদালত এখন ইচ্ছামতো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিচ্ছে, আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তিও জব্দ করছে।”

“এই অপপ্রচারের নেতৃত্বে আছে ইউনুস নিজে। তিনি একদিকে দুদক দিয়ে মিথ্যা মামলা করাচ্ছেন, অন্যদিকে মিডিয়ার মাধ্যমে এসব অপপ্রচার ছড়াচ্ছেন। বাংলাদেশে এখন যেহেতু সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ, কেউ এসব প্রশ্নও তুলতে পারছে না। এরপর ইউনুস বিদেশি মিডিয়ায় গিয়ে বারবার একই মিথ্যে বলছেন।”

সজীব ওয়াজেদ জয় লেখেন, “আমাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নেতিবাচক শিরোনাম বানানো তাদের উদ্দেশ্য।”

ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে মামলা করে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে মোট ছয় মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। এই অনিয়মের অভিযোগে দুদকের করা অন্য মামলায় শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, তাঁর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিককে (ববি) আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন