রাজধানীতে ফলের জুসের নামে বিক্রি করা হচ্ছিল ক্যানাবিস (গাঁজার নির্যাস) ও ক্যাফেইন মেশানো পানীয়। সাধারণভাবে ফলের রস বা ভেষজ পানীয় বলা হলেও এগুলো ছিল শক্তিশালী মাদক।
পল্লবীর একটি জুস বার থেকে সংগ্রহ করা ১৪টি নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষায় এর সত্যতা মিলেছে। এর মধ্যে দুটি নমুনায় ‘খ’ শ্রেণির মাদক ক্যানাবিস ও ৯টি নমুনায় ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। অপর তিনটিতে অবশ্য মাদকের উপস্থিতি মেলেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
ডিএনসির মিরপুর সার্কেলের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঞা সমকালকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ধরনের জুস ও সালসার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো পাঠানো হয় ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে। সেখানকার প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনায় মাদকের উপস্থিতি রয়েছে। এর ভিত্তিতে চক্রের হোতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ আগস্ট পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে ১০ নম্বর সড়কে দীপ্ত জুস বার ও আয়ুর্বেদিক সালসা ঘরে যায় ডিএনসির একটি দল। সেখান থেকে মাদক মিশ্রিত পানীয় সংরক্ষণ ও বিক্রির অভিযোগে মো. খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএনসির এই কর্মকর্তা জানান, অভিযানে বিভিন্ন বোতলে রাখা ক্যানাবিস মেশানো পানীয় ৬৪.৯৫ লিটার এবং ক্যাফেইন মেশানো পানীয় ৯৬.২৫ লিটার জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁর সহযোগী মো. শামীম এসব পানীয় তৈরি করেন। তাঁর বাড়ি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। তবে খোকনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে শামীম আগেই পালিয়ে যান। এ ঘটনায় দু’জনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।
ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইংরেজি বর্ণমালার ‘এ’ থেকে ‘এন’ পর্যন্ত চিহ্ন দিয়ে কথিত জুস ও সালসার নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখানে একটি নমুনায় ছিল কৃত্রিম ম্যাংগো জুস। আরও দুটি পানীয়তে মাদকের উপস্থিতি মেলেনি। বাকিগুলোয় নতুন ধরনের মাদক (গাঁজার নির্যাস ও ক্যাফেইন) পাওয়া গেছে।
ডিএনসি জানায়, কোনো পানীয়তে শতকরা ০.১৪৫ ভাগের বেশি ক্যাফেইন থাকলে তা মাদক হিসেবে গণ্য হয়। সে কারণে অধিক মাত্রায় ক্যাফেইন মেশানো এসব জুস-সালসা মাদক এবং মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আর পুরোনো মাদক গাঁজা প্রক্রিয়াজাত করে এক ধরনের তরল বানিয়ে জুস-সালসায় মেশানো হত। ফলে সেই পানীয় বিকল্প নেশাদ্রব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুস বার নাম দিয়ে পরিচালনা করায় মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণীদের নিরাপদ আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছিল পল্লবীর দোকানটি। সেখানে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোকজনের আনাগোনা থাকত। কেউ কেউ আবার পার্সেল নিয়ে চলে যেতেন। দোকানটিতে প্রতিদিন ৩৫-৪০ হাজার টাকার পানীয় বিক্রি হতো। সেই হিসাবে মাসে তাদের বিক্রি ছিল ১০-১২ লাখ টাকা, যার প্রায় ৯০ ভাগই তাদের মুনাফা। এটি ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আরও কিছু ছোট-বড় দোকানে এই মাদক বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসি সংশ্লিষ্টরা।