ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় বেজায় চটেছেন খালেদ মাহমুদ।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বোর্ডে আসা দুই সাবেক ক্রিকেটারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ।
লম্বা একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন মাহমুদ। পট পরিবর্তনের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে কোচিংয়ে মনোযোগ দেন সাবেক এই অধিনায়ক। বিপিএলে আছেন ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে।
বোর্ড নিয়ে একদমই ভাবছেন না বলে শুরুতে এড়াতে চাইলেন মাহমুদ। তবে পরে দুই কর্তার দ্বন্দ্ব নিয়ে তাদের একরকম ধুয়ে দিলেন তিনি।
“ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে আই অ্যাম নট বদার্ড… লিস্ট বাদার্ড একদম। ঢাকা ক্যাপিটালস নিয়ে আমি বদার্ড, আমার রাজশাহীর একডেমি নিয়ে আমি বদার্ড। ক্রিকেটের ভক্ত হিসেবে, ক্রিকেট বোর্ডে ছিলাম, ক্রিকেটের মানুষ হিসেবে আই হ্যাভ মিক্সড আন্ডারস্ট্যান্ডিং। কারণ আমি অতটা অনুসরণ করি না।”
“কালকের একটা ঘটনা দেখলাম ফারুক ভাই ও (নাজমুল আবেদীন) ফাহিম ভাইয়ের দ্বন্দ্ব। এটা ব্যথা দেয় যে, দুজনই সাবেক ক্রিকেটার। তাদের কেন ইগোর সমস্যা হবে! তারা তো ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যই আসছেন… এবং তারা যখন আসছেন, তখন তো অনেক কমিটমেন্ট করেছেন, আমি দেখেছিলাম। বিশেষ করে ফাহিম ভাই তো অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন, অনেকে বলেছেন যে, উনি অনেক দেখেছেন এবং সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করছেন, চিন্তা করেছেন। সেগুলো আমি এখন দেখছি না। আমি দেখছি লোভ-লালসার মতো হয়ে যাচ্ছে যে, আমি অপারেশন্স (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান) না পেলে কাজ করব না, পদত্যাগ করব। এটা তো লোভ-লালসা স্রেফ!”
“এই লোভ-লালসা কেন তাদের মধ্যে আসে? আমার ক্রিকেট অপারেশন্সই নিতে হবে কেন? আমি যদি অন্য কমিটির চেয়ারম্যান হই, ওখানে সার্ভ করতে পারব না কেন? কেন, উনি কি ক্রিকেট অপারেশন্সের মাস্টার? উনার আগে তো আকরাম ভাই মাস্টার। উনি চাইতে পারে। কারণ আকরাম ভাই বাংলাদেশের সাবেক সফল অধিনায়ক এবং অপারেশন্স চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাহলে উনি (নাজমুল আবেদীন) কেন বলছেন যে, অপারেশন্স ছাড়া হবেই না! এটা তো ইগোর ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। ফারুক ভাই-ফাহিম ভাই, আমার মনে হয় ইগোর সমস্যা। সত্যি কথা বলছি, এটা কী হচ্ছে… আই ডোন্ট নো।”
নিজেদের মধ্যে কথা বলে যে ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়া যায় তা বাইরে বলে বেড়ানো একদমই পছন্দ নয় মাহমুদের। সাবেক এই অধিনায়কের মতে, নাজমুলের উচিত ছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করা নয়তো সরাসরি পদত্যাগ করা।
“সংসারে তো অশান্তি আছেই। কার সংসারে অশান্তি নেই? আমার কথা হলো, তারা দুজনই অনেক সিনিয়র মানুষ। ফাহিম ভাই তো আমাদের সবার গুরু… এরকম একজন ক্রিকেট প্রশিক্ষক। উনি তো বিচক্ষণ, উনি কেন এটা প্রকাশ্যে বলবেন? উনি যদি মনে করেন, উনার সম্মান পাচ্ছেন না, দায়িত্ব পাচ্ছেন না, উনি ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন, ‘ওয়ান টু ওয়ান।’ উনি ফারুক ভাইকে বলবেন, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব হিসেবে যদি কিছু না জানেন, উনি সরাসরি পদত্যাগ করবেন। এটা তো প্রকাশ্যে বলার দরকার নেই!”
“যেটা চার দেয়ালের ভেতরে শেষ হতে পারত, এটা সারা বাংলাদেশের মানুষ কেন জানবে? তারা দুজনই ক্রিকেটার। তাহলে আমাদের ক্রিকেটারদের লোকে কী বলবে! এই কথাটা ভাবা খুব স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে যে, আমরা নিজের স্বার্থের জন্য বোর্ডে যাই। আমাদের সব ক্রিকেটারের জন্য এটা লজ্জার ব্যাপার। দুজন সিনিয়র মানুষ যা করলেন, আমরা যারা জাতীয় দলে খেলেছি বা বাইরে যারা, সব ক্রিকেটারের জন্য লজ্জাজনক। এই যে ইগোর সমস্যা বা কাড়াকাড়ির সমস্যা চলছে যে, কে বোর্ড সভাপতি হবেন, কে অপারেশন্স চেয়ারম্যান, কে ডেভেলপমেন্টের প্রধান… এটা খুবই মজার ও লজ্জাজনক।”
“যখন তাদের এই মন-মানসিকতা দেখি, তখন খারাপ লাগে। দুইজন সিনিয়র মানুষ, আমরা যাদেরকে অনেক সম্মান করি… ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাই, দুজনই আমাদের শ্রদ্ধেয় ও সাবেক ক্রিকেটার। তাদেরকে যখন এমন দেখি ক্রিকেটার হিসেবে, লজ্জিত হই আসলে আমরা ক্রিকেটাররা কী এত বেশি লোভী নাকি!”
এ সম্পর্কিত খবর: