ছেলের কাছে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

Khaleda-Sarmili

‘মুক্ত হওয়ার’ পর বারবার পিছিয়ে অবশেষে লন্ডনের পথে উড়লেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পথে পথে বিদায় জানাতে আসা নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় হলেন সিক্ত।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে রওয়ানা দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর।

গাড়িতে তার পাশের আসনে ডানে বসেছিলেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।

বাম দিকে বসেছিলেন খালেদা জিয়া। পরনে ছিল ‘অফ হোয়াইট’ রঙের জর্জেট শাড়ি। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। গলায় মালা। উপচে পড়া নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে যখন তার গাড়িবহর শম্ভূক গতিতে এগোচ্ছিল, তার ঠোঁটে ঝুলছিল চিরচেনা হাসি।

দেখে মনে হচ্ছিলো নেতাকর্মীদের এই ভালোবাসা, উন্মাদনা বেশ উপভোগ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গাড়ির জানালার কাঁচে হাত রেখে হাসছিলেন ছোট ছেলের স্ত্রীও।

চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হলেও ছেলের সঙ্গে দেখা নেই বেশ ক’বছর। তাই সব ছাপিয়ে বাংলাদেশের মানুষ হয়তো দেখতে যাচ্ছে মা-ছেলের এক আবেগঘন মিলন।  

কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যখন বিএনপি নেত্রীকে নিয়ে উড়লো তখন ঘড়ির কাটায় রাত ১১টা ৪৭ মিনিট। লন্ডনে পৌঁছে ছেলের সান্নিধ্য নিয়ে ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে তার।

এর আগে রাত ১১টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছালে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রথমে যাবেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে।

লন্ডনে খালেদাকে গ্রহণ করবেন তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছেলের বউ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা জারনাজ রহমান।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই খালেদা জিয়া লন্ডন গেলে বিমানবন্দর থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন তারেক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য শাহাবুদ্দিন তালুকদার, এফ এম সিদ্দিক, নূরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও মোহাম্মদ আল মামুনও লন্ডন যাচ্ছেন।

এছাড়া যাবেন ছোট ছেলের স্ত্রী সিঁথি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান।

এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করে দেয় আদালত; মুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এ সম্পর্কিত খবর:

ঢাকা পৌঁছেছে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা যাচ্ছেন আজ

ছেলের কাছে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

বাসায় গিয়ে খালেদার সঙ্গে দেখা করলেন সেনাপ্রধান

আরও পড়ুন