চিকিৎসা শেষে প্রায় চার মাস পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে তিনি ঢাকায় পৌঁছান।
এর আগে সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার পর হিথরো বিমানবন্দর থেকে তাকে নিয়ে যাত্রা করে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে তার মাকে হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শামিলা রহমান। আছেন চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমিরের বিশেষ ফ্লাইটটির অবতরণ করে। এরপর গুলশানের বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সকালেই বিমানবন্দরে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের জন্য ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন।”

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই বিমানবন্দরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই নেতাকর্মীরা বাইরের সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
তারা পিকআপ কিংবা বাসে করে গান বাজাতে-বাজাতে দলের পতাকা, দেশের পতাকা উপস্থিত হয়েছেন নেত্রীকে স্বাগত জানায়। কেউ-কেউ মাথায় দলের পতাকা লাগিয়ে এসেছিলেন।
‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়েছেন তারা।

পল্টন থেকে আসা বিএনপি সমর্থক আজাদ হোসেন বলেন, “চার মাস পর আপসহীন নেত্রী এসেছেন। এটা আমাদের এবং পুরো জাতির জন্য আনন্দের। আমরা এসেছি তাকে বরণ করে নিতে। “
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান।
সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।

দেশে ফেরার জন্য সোমবার দুপেুরে খালেদা জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তারেকের মেয়ে জায়মা রহমানও গাড়িতে ছিলেন।
২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে লন্ডনেই আছেন তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরছেন জোবাইদা, তবে তারেক কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তাকে দেখিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত বিএনপিকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “ভাইয়াকে দেখে রেখো।”
স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে।