লন্ডনে ছেলেকে রেখেই ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গী পুত্রবধূরা

খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান বড় ছেলে তারেক রহমান। লন্ডন, ৫ মে।
খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান বড় ছেলে তারেক রহমান। লন্ডন, ৫ মে।

চার মাস আগে লন্ডনে পৌঁছানোর পর মা-ছেলের মিলনের সেই আবেগঘন মুহূর্ত বহুদিন ভেসে বেড়িয়েছে অন্তর্জালে। ছেলের কাছে থেকে চিকিৎসা নিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কেউ কেউ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সেই বিদেশে যাওয়াকে ‘মাইনাস-টু ফরমুলার’ চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হিসাবে ধরে নিয়েছিলেন। জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবেগঘন বিদায়কে সাঙ্গ করে এবার উড়লেন দেশের পথে, সঙ্গে দুই পুত্রবধূ, যেন ছুটি শেষে বাড়ি ফেরা।

কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে উড়েছে বাংলাদেশের পথে।

তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সঙ্গী হলেও তারেক রহমান লন্ডনেই থেকে গেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে তার মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। মেয়ে জায়মা রহমানও গাড়িতে ছিলেন।

মা’কে পাশের আসনে বসিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে যান তারেক রহমান।

দুপুর থেকেই বিদায় জানাতে দলটির প্রবাসী নেতাকর্মীরা ভিড় জমাতে থাকেন হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিদায়ের মুহূর্তে হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরতে দেখা যায় ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানকে।

২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে লন্ডনেই থাকছিলেন তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান।

বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে আসা বিএনপি নেতাকর্মী ও তারেক রহমানের ঘনিষ্টদের উদ্দেশে খালেদাকে বলতে শোনা যায়- “ভাইয়াকে দ্যাখে রেখো।”

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া।

সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।

তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডন থেকে দোহায় যাত্রাবিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাদের।

ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার ফেরার দিন ৬ মে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জনসাধারণকে এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়ক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের চেয়ারপারসনের বাসায় যাওয়ার পথে বিএনপি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তার দুইধারে অবস্থান নিয়ে নেত্রীকে স্বাগত জানাতে হবে।

ফিরোজা প্রস্তুত

সেনানিবাসের বাসা থেকে উচ্ছেদের পর গুলশানের ৮০ নম্বর সড়কে ‘ফিরোজা’য় উঠেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেই থেকে এই ‘ভাড়া’ বাসাটি তার নিবাস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কদিন ধরেই বাসাটিতে চলছে গোছগাছ; বাড়ির সামনের সবুজ আঙিনা সাজানো হয়েছে ফুল গাছের টব দিয়ে। ভেতরেও কক্ষগুলোতে ঝাড়পোঁছ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে।

গুলশানে খালেদার নিবাস ‘ফিরোজা’।

“ম্যাডামের বাসা কমপ্লিটলি রেডি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা কোনো কিছুই বাদ নেই। ম্যাডামের স্বজনরা সব কিছু তদারক করেছেন। এখন আমরা সবাই ম্যাডামের অপেক্ষায় আছি,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

আরও পড়ুন