ভারতের নাগপুরে মোগল শাসক আওরঙ্গজেবের সমাধিকে ঘিরে বিতর্ক চরমে। এর মধ্যেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) দাবি, আওরঙ্গজেব নয়, ভারতের ‘আইকন’ হতে পারেন তার বড় ভাই দারাশিকো।
সোমবার দেশটির বেঙ্গালুরুতে আরএসএসের সহকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবোলে বলেন, “আওরঙ্গজেবের নীতি কোনও ভাবেই ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। এদেশের প্রেক্ষিতে বরং দারাশিকোর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।” ভারতপ্রেমিক ভগিনী নিবেদিতার কথাও বলেন তিনি।
সম্রাট শাহজাহান ও তার স্ত্রী মমতাজ মহলের বড় ছেলে দারাশিকো।
ইতিহাস বলছে, আওরঙ্গজেবের বিপরীত মেরুর মানুষ ছিলেন দারাশিকো। একাধারে সংবেদনশীল শাসক, প্রগতিশীল কবি ও চিন্তক। ধর্মের ঊর্ধ্বে ভারতীয় সংস্কৃতির পৃষ্ঠোপোষক ছিলেন। ফার্সি ভাষায় গীতা ও উপনিষদ অনুবাদ করেছিলেন দারাশিকো।
আওরঙ্গজেবের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হন দারাশিকো। আওরঙ্গজেবের নির্দেশেই তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।
সোমবার ছিল বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত আরএসএসের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের বৈঠকের শেষ দিন। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে আওরঙ্গজেবের সমাধি প্রসঙ্গে প্রশ্ন ওঠে।
হোসবোলে পালটা প্রশ্ন তোলেন, যারা আওরঙ্গজেব নিয়ে এত কথা বলছেন, তারা কেন দারাশিকোর মতো চরিত্রের কথা বলেন না?
আরএসএসের অন্যতম মুখ বলেন, “কেন দারাশিকো মতো চরিত্রকে তুলে ধরার পক্ষে প্রশ্ন করা হয়নি? যারা ভারতীয় সংস্কৃতির পক্ষে প্রশ্ন করতেন আর যারা সেই সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচরণ করতেন— আমাদের কাদের তুলে ধরা উচিত, তা নিয়ে ভাবা দরকার?”
তিনি বলেন, “আমার মতে, যারা এ দেশের সংস্কৃতি, মাটি ও পরম্পরাকে শ্রদ্ধা করেন, তাদের নায়ক বানানো উচিত। আওরঙ্গজেব কোনও ভাবেই ওই তালিকায় আসেন না। কিন্তু দারাশিকো অবশ্যই পড়েন।”
ভগিনী নিবেদিতার উদাহরণ টেনে আরও বলেন, “ধর্ম ও জাত এখানে বিষয়ই নয়। ভগিনী নিবেদিতা খ্রিস্টান হলেও এ দেশের সংস্কৃতিকে আপন করেছিলেন। তাই তিনি শ্রদ্ধেয়।”
২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই দিল্লির আওরঙ্গজেব রোডের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। নতুন নাম হয়েছিল এপিজে আব্দুল কালাম রোড।