খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ও সহউপাচার্য শেখ শরীফুল আলম পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার তাদের পদত্যাগের খবর এলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানিয়েছে, তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এর আগে কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে।
এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।
বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর রাত ১টার দিকে অনশন ভাঙেন কুয়েটের অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান জুস পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙান।
কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল সমর্থকদের মধ্যে। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
সংঘর্ষের পরদিন প্রতিবাদে কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে খানজাহান আলী থানায় মামলা করে কুয়েট প্রশাসন।
এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ১৪ এপ্রিল রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে ১৮ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ১৫ এপ্রিল কুয়েট উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ১৬ এপ্রিল দুপুরে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
পরদিন ১৭ এপ্রিল উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেয়। এরপর উপাচার্য পদত্যাগ না করায় গতক ২১ এপ্রিল সোমবার থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর করা জানানোর পর অনশন ভেঙে রাতেই হলে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।