জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রতিনিধিরা দেখা করার আড়াই ঘণ্টা পর লামিয়ার আত্মহত্যা

Suicide

‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটালেন লামিয়া। ওই প্রতিনিধিরা যতক্ষণ ছিলেন লামিয়া ছিলেন চুপচাপ। খুব একটা কথা বলেননি। শুধু একটি প্রশ্ন করেছিলেন, “আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে, তাহলে আমার সঙ্গে এমন হলো কেন?”

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রতিনিধিরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলে, “এটা তোমার জীবনের একটি দুর্ঘটনা, তোমাকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সামনে পরীক্ষা, মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।”

এসব কথা শুনতে শুনতে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নারী প্রতিনিধি সেবন্তীকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকেন লামিয়া।

এরপর জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা ফিরে আসেন। কিন্তু এর আড়াই ঘণ্টার মধ্যে খবর আসে লামিয়া আত্মহত্যা করেছেন।

মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।

হাসপাতালে ছুটে যান জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা। এসময় ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিরা লামিয়ার সঙ্গে আজই দেখা করেছিল। তার সঙ্গে অনেক কথাও হয়েছিল। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সে মানসিকভাবে খুবই খরাপ অবস্থায় ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়া দায়িত্ব ছিল সরকারের, কিন্তু রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।”

দ্রুত বিচার শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে লামিয়ার বাবা জসীম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বাবাকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় কলেজশিক্ষার্থী লামিয়া। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করে।

এরপর থেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন লামিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রোববার বিকালে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা রুমা বেগম ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদ্রাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের বি/৭০ নম্বর বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

লামিয়ার মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনী মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। আমার ভাগনির ধর্ষকরা জামিন পেয়ে গেছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।”

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, “শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ধর্ষকদের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানান। তিনি বলেন, “এমন কিছু মানুষ আছে, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads