কানাডার আগাম নির্বাচনে লিবারেলদের জয়

মার্ক কার্নিই থাকছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। ছবি: বিবিসি
মার্ক কার্নিই থাকছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। ছবি: বিবিসি

কানাডার আগাম নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টির বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি পার্লামেন্টের ৩৪৩ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে।

সিএনএন-এর সহযোগী সিটিভি ও সিবিসি উভয়ই পূর্বাভাস দিয়েছে, লিবারেলরা টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট আসন জিতবে। তবে ভোট গণনা এখনও চলছে, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ নাকি সংখ্যালঘু সরকার হবে তা বলার মতো সময় এখনও আসেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য একটি দলের ১৭২টি আসন প্রয়োজন।

বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোলিয়েভ ইতোমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কার্নি ‘সংখ্যালঘু সরকার’ গঠনের জন্য যথেষ্ট আসন জিতেছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করার পর নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে মার্ক কার্নি লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েই কানাডায় ট্রাম্প-বিরোধী মনোভাবের ঢেউ তোলেন। তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হিসেবে সংযুক্ত করার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং কানাডার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বাণিজ্য অংশীদার কানাডার ওপর বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধির হুমকির প্রতিক্রিয়ায় মার্ক কার্নি মার্চের শেষের দিকে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “কানাডাকে দুর্বল করার, আমাদের ক্লান্ত করার, আমাদের ভেঙে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা আমি প্রত্যাখ্যান করি। আমরা আমাদের নিজেদের ঘরে কর্তা।”

হতাশাজনক জনমত জরিপ, জীবনযাত্রার গুরুতর সংকট এবং মন্ত্রিসভায় অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখে পড়ে জাস্টিন ট্রুডো যখন গত জানুয়ারিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, তখন বিরোধী দলীয় নেতা পোলিয়েভের জেতার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। সে সময় পরিচালিত বিভিন্ন জনমত জরিপে তেমন আভাসই মিলছিল।

তবে কানাডীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক এবং দেশটির সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি নাটকীয়ভাবে দেশটির সাধারণ নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে একটি গণভোটে পরিণত করে।

পোলিয়েভ বলেছেন, তার কনজারভেটিভ পার্টি ‘কানাডার স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা’ করার জন্য কার্নি এবং অন্যান্য দলের সাথে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক এবং অন্যান্য দায়িত্বজ্ঞানহীন হুমকির মোকাবিলা করার সময় আমরা সর্বদা কানাডাকে প্রথমে রাখব।”

কার্নি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কখনও রাজনৈতিক পদে ছিলেন না। তবে আর্থিক খাতে তার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা সংকট ও অস্থিরতার মধ্যেও কানাডার সরকার পরিচালনায় তাকে সহায়তা করেছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর কার্নি যখন কানাডার প্রধানমন্ত্রীল দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে বেরিয়ে কানাডাকে নিজস্ব পথ তৈরির ধারণাটি তার বার্তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। কার্নি তার পুরো নির্বাচনী প্রচারজুড়ে নিজেকে একজন অভিজ্ঞ পেশাদার হিসেবে তুলে ধরেন, যিনি গভীর অস্থিরতার মধ্যেও কানাডার অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সক্ষম।

অক্টোবরে পডকাস্টার নেট এরস্কিন-স্মিথকে কার্নি বলেছিলেন, “আমি বুঝি বিশ্ব কীভাবে কাজ করে। আমি বিশ্বের বৃহত্তম কিছু কোম্পানির পরিচালকদের চিনি এবং তারা কীভাবে কাজ করে তা বুঝি। আমি জানি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করে। আমি জানি বাজার কীভাবে কাজ করে… আমি কানাডার সুবিধার জন্য এটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি।”

কানাডীয় রপ্তানির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের শুল্ক দেশটির অর্থনীতি এবং দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে। কানাডীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত এবং ওষুধ ও কাঠের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি কানাডীয় ব্যবসায়ীদের নাড়িয়ে দিয়েছে এবং দেশকে মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কার্নি এই বাস্তবতা গোপন রাখেননি, কানাডীয় কর্মসংস্থানের ওপর চাপ দিয়ে ‘কঠিন দিন আসছে’ বলে সতর্ক করেছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads