মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে ‘জুলাই বিপ্লবের’ চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় তা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রশ্ন রেখে বলছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার দুঃসাহস কোথায় পান জেলা প্রশাসক?
লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার গঠন, স্বাধীন ভূখণ্ডে নব রবির উদয়, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয়ে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, জাতীয় পতাকা হাতে উল্লসিত জনতা ইত্যাদি।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বুধবার জেলা প্রশাসন সেই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিল।
এব্যাপারে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।”
বায়ান্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ ম্যুরালে থাকলে চচ্চিশ আন্দোলনের চেতনার সাথে কি করে সাংঘর্ষিক হয়? এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জেলা প্রশাসক হওয়া এইচ এম রকিব হায়দার।
গত ১০ সেপ্টেস্বর ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক থেকে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের পদ পান এইচ এম রকিব হায়দার।
২৬ মার্চের আগে এই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
স্বাধীনতা দিবসের সকালে স্থানীয় কয়েকটি সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে।এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠেরর কর্মীরা ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহিদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন তারা।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক)।
সনাকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত লালমনিরহাটে ২০২৪ সালর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
লালমনিরহাট সনাকের সভাপতি বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক অসুস্থতার কারণে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। এমন একটি ম্যুরাল ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর ও গতকাল ২৬ মার্চ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।”
লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও অবদানে আমরা এ দেশ পেয়েছি। তাদের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এ অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।”
লালমনিরহাট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ বলেন, “লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল স্মৃতিস্মারকটি যদি চলমান সময়ের জন্য অনুপযুক্ত হয় তাহলে ম্যুরালটি ধ্বংস করে দিন। তবু সারা বছর সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে বিশেষ বিশেষ দিনে কাপড় দিয়ে ঢেকে সার্কাস করবেন না।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকমল হোসেন বলেন, “পাবলিক সার্ভেন্ট হয়ে একজন ডিসি কি করে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ধৃষ্টতা দেখান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে তিনি দালালি শুরু করেছেন। তিনি ডিসি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।”
জেলা প্রশাসক রকিব হায়দারকে দ্রুত প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।