“কলকাতা শহরে বাবার নামে একটা রাস্তার নামকরণ হয়েছে মাত্র। যেখানে তার নামে অন্তত একটা আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা যেত, সেখানে শুনেছি ক্লাবঘর তৈরি হয়েছে!”-খেদের এই কথাগুলো বলেছেন ভারতের কিংবদন্তি জাদুশিল্পী পি সি সরকারের ছেলে পি সি সরকার জুনিয়র।
তিনি বলেছেন, তার বাবার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ঘিরে নানা স্মৃতি ধরে রাখতে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র দিয়ে সংগ্রহশালা তৈরির যে উদ্যোগ তারা পারিবারিকভাবে নিয়েছেন, সে কাজে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না।
পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার হলেও জাদুশিল্পী পরিচিত ছিলেন পি সি সরকার নামে। এই শিল্পী জন্মেছিলেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে ১৯১৩ সালে; তিনি অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন ১৯৭১ সালে।
জাদুশিল্পীর ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার তার ছেলে জাদুশিল্পী পি সি সরকার জুনিয়র এই আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন আনন্দবাজারকে।
জুনিয়র বলেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্নাটকসহ দেশের বাইরের থেকেও সংগ্রহশালা তৈরিতে সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছে। এছাড়া বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে পৈতৃক ভিটায় পি সি সরকার সিনিয়রের নামে একটি সংগ্রহশালা তৈরির যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেখানে তিনি তার বাবার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন এই জাদুশিল্পী।
জাদুকর পি সি সরকার পৃথিবীতে না থাকলেও তিনি তার সন্তানদের ‘কাছে রয়েছেন’ বলে মনে করেন জাদুশিল্পী পি সি সরকার জুনিয়র।
বদৌলতেই তিনি নিজে একজন জাদুশিল্পী হয়ে উঠেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন জুনিয়র।
পি সি সরকারকে নিয়ে মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজন থাকলেও এদিন কলকাতার বালিগঞ্জের ‘ইন্দ্রজাল ভবনে’ (পি সি সরকারের বাসভবন) কয়েক ঘণ্টা সময় কাটান পি সি সরকার জুনিয়র।
দিনটিতে কী কী করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “‘ইন্দ্রজাল ভবনে’ বাবার অফিসে বসে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাই। চেষ্টা করি নিজের মত কিছু লেখালিখি করতে। চেষ্টা করি বাবার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোকে মনে করতে, তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্রগুলি একটু নেড়েচেড়ে দেখতে। তার মধ্যে দিয়েই যেন বাবাকে আরও একবার অনুভব করতে পারি। পরিবারের সবাই উপস্থিত থাকেন। এবারেও তার অন্যথা হয়নি।”
মৃত্যুদিনে দেশসহ সারা বিশ্বের ম্যাজিক সোসাইটি থেকে প্রচুর ফোন পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন পি সি সরকার জুনিয়র।
“কোথায়, কীভাবে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে, সে ছবি এবং ভিডিও পাঠান অনেকেই। আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আমরা বাঙালিরাই হয়তো বাঙালিকে সব সময় মনে রাখি না।”
বাবার স্মৃতির স্বাক্ষরগুলো টিকিয়ে রাখতে একটি জাদুঘর স্থাপনের লালিত স্বপ্নের কথাও জানিয়েছেন এই জাদুশিল্পী।
তবে পি সি সরকার সিনিয়র ‘ইন্দ্রজাল ভবন’ তার তিন সন্তারের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন, ফলে সেখানে জাদুঘর স্থাপন সম্ভব নয় বলে বারুইপুরে নিজেদের বাড়ির সংলগ্ন জায়গায় একটি সংগ্রহশালা স্থাপনের চেষ্টা করছে তার পরিবার। সেখানে জাদুকরের নামে তৈরি হয়েছে একটি মঞ্চও।
সেই সাথে এই সংগ্রহশালা তৈরিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
“দুঃখের বিষয়, বাবাকে নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরির জন্য বাংলার তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্নাটক সরকার অনেক বেশি উৎসাহী। সেসব রাজ্যের সরকার আমাকে জমিও দিতে আগ্রহী।”
বাংলাদেশে নিজেদের ভিটেমাটির কথা স্মরণ করে পি সি সরকার জুনিয়র বলেন, “আমরা তো ওপার বাংলা থেকে এখানে এসেছিলাম। বাংলাদেশে আমাদের পৈতৃক বাড়িটিতে বাবার নামে একটি জাদুঘর তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তারা আমার থেকে বাবার বেশ কিছু পোস্টার, হাতের লেখা এবং বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র চেয়েছিলেন। আমি কিছু দিয়েও দিয়েছি। কী আর করা যাবে! এখন শুধু ভয় হয়, বাবাকে ঘিরে আমার স্বপ্নগুলো যেন বাংলার বাইরে না চলে যায়। আর চলে গেলেও আমি তো নিরুপায়।”
পি সি সরকার সিনিয়রকে ‘সার্বজনীন এক ব্যক্তিত্ব’ বর্ণনা করে তিনি বলেন, “তিনি তো কেবল আমার বাবা নন। আমাদের সবার। তাই সবাই মিলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, তখন দেখা যাবে।”