মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি তিন আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ওই শিশুর বোনের শ্বশুর হিটু শেখ। এর মধ্যে দিয়ে বিচার শুরুর ২৫ দিনের মাথায় আলোচিত এই মামলার রায় এলো।
তিন আসামি খালাস পাওয়ায় রায়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন শিশুটির মা; মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি হিটু শেখের মেয়ে এনেছেন একপেশে বিচারের অভিযোগ।
শনিবার সকালে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান ওই রায় ঘোষণা করেন।
গত ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার পর আসামিদের উপস্থিতিতে টানা শুনানি চলে।
মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায়, শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।
এর আগে ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়।
২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশু। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের বিচারের ঘোষণা দেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিদের পাশাপাশি মামলার বাদী শিশুটির মা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ওই নারী সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমি খুশি না। এই মামলায় তিন আসামি খালাস পেল? ওরা তো এ কাজে সহযোগিতা করিছে। আমার বড় মেয়েরে হুমকি দেছে। তারে মারধোর করছে, মুখ আটকায় রাখছে। ওরাও দোষী, ওদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।”
অন্যদিকে বিচার একপেশে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মেয়ে।
তিনি বলেছেন, “এখানে কোনো উকিল আমাদের পক্ষে দাঁড়াতে চায়নি। লিগ্যাল এইড থেকে একজন উকিল দেওয়া হইছিল, সে আমাদের কথা আদালতে ভালোভাবে বলেনি। আমরা কয়েকজন সাক্ষী দিতে চাইছিলাম। আইনজীবী বলে, এ সাক্ষী দেওয়া যাবে না।“
“আমার আব্বার ফাঁসি দিয়ে যদি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, হোক। কিন্তু যা হলো, তা একপেশে বিচার,” যোগ করেন তিনি।