লাখো মানুষের সমাগমে যেন জনসমুদ্র ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির কথা যেমন ধ্বনিত হয়েছে সমবেত কণ্ঠে, তেমনি এসেছে গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার বিচারের দাবি।
ফেইসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট পেইজ খুলে এ কর্মসূচির ডাক দেয় প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।
শনিবার সেই ডাকেই জমায়েতে অংশ নেন লাখো মানুষ। গণজমায়েত থেকে দেওয়া একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করে শোনান দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
এর আগে কর্মসূচিতে যোগ দিতে শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে উদ্যোনের আশপাশ শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট, মৎস্য ভবন ভিড় জমে যায়।
অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে নানা ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ছিল ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা।

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে পড়ে শোনানো ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আদালতে জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতি নয়, অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘসহ মুসলিম বিশ্বকে দায়িত্ব নিতে হবে। ১৯৬৭ সালের আগে ফিলিস্তিনিদের যে ভূমি ছিল, সেগুলো ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দিতে দখলদার ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার পথ উন্মুক্ত করা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্বের সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপর বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানানো হয়।
ঘোষণাপত্রে খাদ্য, চিকিৎসা ও প্রতিরক্ষা সহায়তা নিয়ে মজলুম গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের পাসপোর্টে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্তটি ফিরিয়ে আনা, ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেন ইসলামিক বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা সমাবেশে অংশ নেন।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, ইসলামী বক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।