স্মরণে জাতির সূর্যসন্তান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাহীন করার লক্ষ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ফাইল ছবি
পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাহীন করার লক্ষ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ফাইল ছবি

আলোকবর্তিকা হয়ে শোষিত আর বঞ্চিত বাঙালিকে মুক্তির পথে নিয়ে গিয়েছিলেন যারা, অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রাণ, জাতির সেই সূর্যসন্তানদের স্মরণে পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর টানা ২৪ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের মাধ্যমে ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনৈতিক শোষণ-নিপীড়নে শিকার হয় তখনকার পূর্ব পাকিস্তান। তার প্রতিবাদে মাথা তুলে দাঁড়ায় বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে।

দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির বিজয় যখন আসন্ন, তখনই ঘটে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সেই হত্যাকাণ্ড। আর এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছিল বাংলাদেশেরই পাকিস্তানি দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনী।

এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে। যাদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান মানুষ।

বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই চালায় ওই নিধনযজ্ঞ চালায়।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঘটে যাওয়া ওই নৃশংসতম ঘটনার পর শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। বর্তমানে জায়গাটি বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত।

এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রায় অর্ধ শতক পর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জনের একটি তালিকা করা হয়।

রোববার সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবিচল সাহস ও দৃঢ় অবস্থান দেশের ইতিহাসে অনন্য ও চিরস্মরণীয়।

তিনি বলেন, “১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সেসব সূর্যসন্তান ও শহীদ বুদ্ধিজীবীকে, যাদের আত্মদান আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছে। আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম রূপকার। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই তাঁদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads