সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের, দাবিতে অনড়

এনবিআর ভবন।
এনবিআর ভবন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চার দফা দাবি পূরণে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এখনই এনবিআর বিলুপ্ত হচ্ছে না। দেশের স্বার্থে এনবিআর কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

ওই বিজ্ঞপ্তির জবাবে রাতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

ঐক্য পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বিলুপ্তির জন্য জারি করা অধ্যাদেশ বাতিল এবং এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

“অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যৌক্তিক দাবিগুলোর অংশবিশেষ পূরণ হলেও তাদের মৌলিক চারটি দাবি বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

“এখনও অধ্যাদেশ বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি; এনবিআরকে বিলুপ্ত করা নয়, বরং সংস্কারের মাধ্যমে একে একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রাজস্ব এজেন্সি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি।“

পাশাপাশি ঐক্য পরিষদের দ্বিতীয় দাবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি। তাদের তৃতীয় দাবি রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার ঘোষণাও আসেনি।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত সমঝোতা প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বিষয়ে তারা অবগত নন।

“এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চায়, বিগত দিনের কর্মসূচিতে কোনও পদ-পদবি হ্রাস বা বৃদ্ধির বিষয়েও আমরা কোনও বক্তব্য প্রদান করিনি, এগুলো আমাদের দাবিও নয়, ছিলও না কোনও দিন।”

সরকার তাদের দাবি না মানার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

“ধীরে ধীরে যথেষ্ট সময় দিয়ে কর্মবিরতি তীব্র করতে বাধ্য হয়েছি। সরকার শুরু থেকে আমাদের যৌক্তিক দাবি আজকের মতো ভাবার ইচ্ছা করত তাহলে অনেক আগেই এই সমস্যার সুরাহা হয়ে যেতো বলে আমরা মনে করি।

“অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রেস রিলিজে অধ্যাদেশ জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ রয়েছে এবং এগুলো সময়সাপেক্ষ বলে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বলার সময় এখন নয়। আমরা এখনও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাঠামো নিয়ে একমত হতে পারেনি। সেই কাজগুলো করার আগে রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি, প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে একটি উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।”

দাবি আদায়ে কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে এনবিআর কর্মীরা। ফাইল ছবি।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

এই অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে গত ১৪ মে ‘কলম বিরতি’ নামে আন্দোলনে নামে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। পরে অবশ্য অসহযোগ শুরু করলে পুরো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

এদিকে, এনবিআর বিলুপ্ত করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআর, কাস্টমস হাউস এবং দেশের সব কর অঞ্চলগুলোতে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে সপ্তম দিনের মতো কর্মবিরতি চলছে।

এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনের আশ্বাস দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জারিকৃত অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ বিদ্যমান ব্যবস্থায় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”

এরপরই নিজেদের মূল চারটি দাবি মানার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার কথা বলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। দাবি পূরণের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানায় ঐক্য পরিষদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads