শাপলা না পেলে কী করবে এনসিপি?

নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে শাপলা চেয়েছে ‘কিংস পার্টি’র তকমা লেগে যাওয়া এনসিপি।
নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে শাপলা চেয়েছে ‘কিংস পার্টি’র তকমা লেগে যাওয়া এনসিপি।

মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী ভোটের বাকি আর মাত্র পাঁচ মাস। কিন্তু অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধনই এখনও হয়নি। তাদের নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনের কোনো আপত্তি এখন আর নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে প্রতীক নিয়ে।

এনসিপি নেতারা চাইছেন, তারা জাতীয় ফুল শাপলা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, এই প্রতীক তারা দিতে পারছে না।

নিবন্ধন পেতে এনসিপিকে অন্য প্রতীক বেছে নিতে বলছে ইসি। কিন্তু এনসিপি তা মানতে চাইছে না। তাদের শাপলাই চাই।
গত ফেব্রুয়ারিতে এনসিপি গঠনের সময়ই নিজেদের প্রতীক হিসাবে শাপলাকে তুলে ধরে প্রচার শুরু করে এনসিপি; যদিও তখনও আপত্তি উঠেছিল এই কারণে যে জাতীয় প্রতীকের মধ্যে শাপলা রয়েছে, আবার শাপলা জাতীয় ফুলও।

শাপলা ফুল সবার কাছে পরিচিত বলে ভোটে তা সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন এনসিপির নেতারা। আবার ২০১৩ সালে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সভাটি হয়েছিল মতিঝিলেরর শাপলা চত্বরে, সেই সমাবেশ পণ্ড করতে আওয়ামী লীগ সরকার গণহত্যা চালিয়েছিল বলে ধর্মীয় সংগঠনটি দাবি করে।

এনসিপির সঙ্গে হেফাজতের বেশ ঘনিষ্ঠতা দৃশ্যমান। হেফাজত যেহেতু নির্বাচন করে না, সেহেতু তাদের ভোট টানার ক্ষেত্রে শাপলা সুবিধা দিতে পারে, তাও এনসিপি নেতাদের কথায় উঠে আসছে।

তা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর এনসিপির নিবন্ধনের আবেদন প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিবেচিত হওয়ার পর তা ইসি দলটিকে জানিয়েছে সম্প্রতি।

৩০ সেপ্টেম্বর পাঠানো সেই চিঠিতে বলা হয় যে এনসিপির চাওয়া অনুযায়ী শাপলা প্রতীক তাদের দেওয়া যাচ্ছে না। ইসির তালিকায় থাকা ৫০টি প্রতীকের মধ্য থেকে পছন্দের একটি বেছে নিয়ে তা আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে এনসিপিকে।

এনসিপি তাদের প্রথম আবেদনে প্রতীক হিসাবে শাপলা না পেলে কলম ও মোবাইল ফোনের কথা উল্লেখ করেছিল। কিন্তু পরে আবেদন সংশোধন করে শাপলা নাহলে সাদা শাপলা ও লাল শাপলা চেয়েছে।

কিন্তু ইসির তালিকায় কোনো ধরনের শাপলাই নেই। রয়েছে- আলমিরা, উটপাখি, কলম, কলস, কাপ-পিরিচ, কম্পিউটার, কলা, খাট, ঘুড়ি, চার্জার লাইট, চিংড়ি, চশমা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, তবলা, তরমুজ, থালা, দালান, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, ফ্রিজ, বক, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বালতি, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ, লাউ, লিচু, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।

ইসির চিঠি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, “আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চিঠির জবাব দেব।

“কিন্তু শাপলা প্রতীক চেয়ে আমাদের আগের দুটি চিঠি বা আবেদন নিষ্পত্তি না করেই ইসি এই চিঠি দিয়েছে। আমরা মনে করি, এই ইসির এই পদক্ষেপ আইনানুগ হয়নি।”

তাহলে এনসিপি এখন কী করবে- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চিঠির একটা জবাব দেব। আর শাপলা প্রতীকের বিষয়টা আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করার চিন্তা করছি।”

সেই মোকাবেলা কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট করেননি এনসিপির এই নেতা।

ইসির কাছে প্রতীক হিসাবে শাপলা নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল। কিন্তু তারে বদলে তাদের কেটলি দিয়েছে ইসি।

এখন এনসিপিকে যদি শেষমেষ ইসি শাপলা দেয়, তাহলে মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “শাপলা প্রতীক যদি তাদের (এনসিপি) দিয়ে দেয়, কোনো মামলা করব না।

“আমাকে যদি জাতীয় প্রতীকের কারণে শাপলা না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কাউকে দিতে পারে না। ওরা (এনসিপি) আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়সের কারণে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদি। শাপলা প্রতীক যদি তাদের দিয়ে দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি, আমি কোনো মামলা করব না।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন