কানাডার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মার্ক কার্নি, বাণিজ্যযুদ্ধ জয়ের প্রত্যয়

কাডানার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন মার্ক কার্নি।
কাডানার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন মার্ক কার্নি।

কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে জয়ী হয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি। তিনি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হবেন।

বড় ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাওয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাওয়া মার্ক কার্নি এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

৫৯ বছর বয়সী কার্নি তার বিজয়ী বক্তৃতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনাও করেন। ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন। এর আগে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার কথাও বলেন ট্রাম্প।

এসব বিষয়ে কার্নি বলেন, “আমেরিকানদের কোনো ভুল করা উচিত নয়। হকির মতো বাণিজ্যেও কানাডাই জিতবে।”

এর আগে কখনো নির্বাচিত পদে দায়িত্ব পালন না করা মার্ক কার্নি কানাডার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও গভর্নর ছিলেন। কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের নেতৃত্বও দেবেন তিনি।

প্রায় এক যুগ ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা জাস্টিন ট্রুডো গত জানুয়ারিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। আবাসন সংকট এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দলের অভ্যন্তরীণ চাপে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপরই লিবারেল পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডেই রোববার মার্ক কার্নি ৮৫.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। কাডানার রাজধানী অটোয়ায় ফল ঘোষণার সময় সেখানে উপস্থিত কার্নির সমর্থকদের তুমুল হর্ষধ্বনি শোনা যায়।  লিবারেল পার্টির তথ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনে দলটির দেড় লাখের বেশি সদস্য ভোট দিয়েছেন।

মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এমন একটি দলের নেতৃত্ব দেবেন, যে দলটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে তিনি আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন। আবার বিরোধীরা পার্লামেন্টে তার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও উত্থাপন করতে পারে।

দেশের বিভিন্ন সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতার কারণে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দলীয় চাপে ট্রুডো প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের কানাডাকে গ্রাস করার হুমকি ও শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে কানাডীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

এতে বছরের শুরুতে কনজারভেটিভদের থেকে ২০ পয়েন্টের বেশি পিছিয়ে থাকা লিবারেল পার্টিকে এখন কিছু জরিপে প্রায় সঙ্গে সমানে সমান অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে।

কার্নির বিজয়ী ভাষণের বেশিরভাগ অংশই ছিল ট্রাম্পের ‘অযৌক্তিক শুল্ক’ নিয়ে, যা যুক্তরাষ্ট্র তার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার কানাডার ওপর আরোপ করেছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কানাডীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন,  কয়েক দিনের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্যগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়। জবাবে কানাডাও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের অর্থনীতি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টার করছে।

কার্নি তার বিজয়ী ভাষণে ট্রুডোর অবস্থান ধরে রাখেন। ট্রাম্পের সমালোচনা করে তিনি বলনে, “ট্রাম্প কানাডিয়ান শ্রমিক, পরিবার ও ব্যবসার ওপর আক্রমণ করছেন। আমরা তাকে সফল হতে দিতে পারি না।” তিনি জানান, তার সরকার আমেরিকার পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক বহাল রাখবে “যতক্ষণ না আমেরিকানরা আমাদের প্রতি সম্মান দেখায়।”

কানাডার অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপের হুমকি পুরোপুরি কার্যকর হলে দেশটি মন্দার মুখে পড়তে পারে। কার্নি বলেন, “আমি জানি এগুলো অন্ধকার দিন। আমরা ধাক্কা কাটিয়ে উঠছি, কিন্তু শিক্ষাগুলো কখনো ভুলে যাব না। নিজেদের দেখভাল আমাদেরই করতে হবে এবং একে অপরের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।”

ট্রাম্পের আরেকটি অভিযোগ– কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ও ফেন্টানাইলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযোগের জবাবে কার্নি ‘সীমান্ত সুরক্ষিত করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতাকে আক্রমণ করে বলেন, “পিয়ের পোয়েলিভ্রের পরিকল্পনা আমাদের বিভক্ত ও পরাধীন করবে। যে ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূজা করে, সে তার সামনে দাঁড়াবে না, বরং হাঁটু গেড়ে বসবে।”

মার্ক কার্নি মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ আগে ট্রুডো একটি আবেগঘন বিদায়ী বক্তৃতা দেন। তিনি ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কানাডার ‘অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ’-এ পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়অ মার্ক কার্নি একটি মধ্যপন্থী এজেন্ডা নিয়ে এসেছেন, যা ট্রুডোর বামপন্থী নীতি থেকে সরে এসেছে। তিনি পাইপলাইনের মতো বড় শক্তি প্রকল্প, আবাসন ও পরিচ্ছন্ন শক্তিতে বিনিয়োগ এবং আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ফেডারেল সরকারের আকার সীমিত করার কথাও বলেছেন, যা ট্রুডোর অধীনে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads