ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলে হওয়া নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে বহু আগেই পার পেয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া একই অভিযোগের মামলাটি। পনের বছর এ নিয়ে হলো দৌড়ঝাঁপ, চললো শুনানি। অবশেষে আদালত পর্যবেক্ষণে বলল, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই খালেদাকে আসামি করা হয়েছিল।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম এই পর্যবেক্ষণ দেন। সেইসঙ্গে বেকসুর খালাস পেলেন খালেদাসহ আটজন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলে যে যুক্তিটি দেখিয়েছিল হাই কোর্ট; বুধবারের রায়ে বিচারিক আদালতের কণ্ঠেও ছিল অভিন্ন ভাষ্য।
বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, “তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। নাইকোর দুর্নীতির ঘটনায় শেখ হাসিনার নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পরে খারিজ হয়ে যায়। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
“এমনকি তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তাই খালেদা জিয়াসহ আট আসামিকে মামলার দায় হতে খালাস দেওয়া হলো।”
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেন।
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগে এ মামলা হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে তাদের রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।
২০২৩ সালে ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার বিচার চলাকালীন ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।