শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল সচিবালয় এলাকা। হাজার হাজার বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। সেখানে গুলি করতেও দেখা গেছে। আহত শতাধিক শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
মঙ্গলবার বিকেলের এই ঘটনায় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আনুমানিক শ‘খানেক শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় সেখানে নেওয়া হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। এ সময় সেখানে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে নিয়ে যায়।
একটি ভিডিওতে শিক্ষার্থীরা তাদের উপর গুলি না চালানোর আকুতি জানাতে দেখা যায়। তবে পাশেই তখন বন্দুক তাক করে থাকা কয়েকজন পুলিশকে দেখা যায়। এছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দও শোনা গেছে।
লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
দুপুরের পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। সেসময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে সচিবালয় এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন।

সাইন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজসহ রাজধানীর কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বিক্ষোভে যোগ দিলে তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রথমে তারা শিক্ষা ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে সেখান থেকে সচিবালয়ের সামনে এসে বসে পড়েন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সচিবালয়ের সামনে আসার পরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের আলোচনার জন্য ২০ মিনিটের সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময় অতিবাহিত হলেও সরকারের পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢোকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’— এমন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানভীর বলেন, “গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থীরা জানতেও পারেনি।
“সকালবেলা অনেকের পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।”

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, “প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে।”