পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
শুক্রবার রাওয়ালপিণ্ডিতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ইমরান খান সেই শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত, যিনি পাকিস্তানের সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন। ইমরান খানের ‘সশস্ত্র বাহিনীবিরোধী প্রচার’ নিয়েও কঠোর বক্তব্য এসেছে তার মুখ থেকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন ‘গাদ্দার’ বলছিলেন তখন তার চোখেমুখে ছিল প্রচণ্ড ঘৃণা।
সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল চৌধুরী দাবি করেন, “ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রচার চালাচ্ছেন, বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমন্বয় করছেন এবং নানা ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন।”
তার ভাষ্য, পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতেই’ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তিনি। এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “রাষ্ট্রের ওপরে কেউ নয়।”
ইমরান খানকে উদ্দেশ্যে করে আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, “একজন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যার নাম না নিলেও সবার জানা, নিজের অহংকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে তিনি মনে করেন, ‘আমিই কিছু‘।”
এই বিভ্রান্তিকর মানসিকতার কারণেই তার বয়ান ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে’ পরিণত হয়েছে।
জেনারেল চৌধুরী অভিযোগ করেন, ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারে বৈঠকের পরপরই বারবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর বার্তা পাঠান এবং এসব বার্তা পরে বিদেশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সমন্বিত প্রচারাভিযান’ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তিনি দাবি করেন, ইমরান খান নিজের তত্ত্বাবধানে একটি ‘বৈজ্ঞানিক ও সমন্বিত ট্রোল নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছিলেন, যেটি নিয়মিতভাবে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের এক পর্যায়ে জেনারেল চৌধুরী বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে টেনে আনেন।
তিনি বলেন, ইমরান খান নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বারবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিজের তুলনা করেন এবং অতীতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘বিকৃত ব্যাখ্যা’ দেন।
“তার সোশাল মিডিয়া টুইট দেখলে বুঝবেন, তিনি শেখ মুজিব রহমানের কত বড় ভক্ত! কথায় কথায় তার উক্তি টেনে আনেন, তার উদাহরণ দেন। অথচ মুজিব আমাদের দেশের জন্য এক নম্বর গাদ্দার (বিশ্বাসঘাতক)।
“কারণ, তিনি মনে করেন, তিনিই সব বোঝেন, বাকিরা সব ভুল।”
ইমরান খানের প্রচারের সঙ্গে ভারত, আফগানিস্তান এবং বিদেশে থাকা ট্রোল নেটওয়ার্কগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলেও সন্দেহ আইএসপিআর মহাপরিচালকের।
তিনি বলেন, “একটি টুইটের পরপরই বিদেশি অ্যাকাউন্টগুলো যেভাবে ক্রমান্বয়ে সাড়া দেয়, তাতে বোঝা যায়- এটি সংগঠিত প্রচারণা।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী দাবি করেন, সাম্প্রতিক এক পোস্টে ইমরান খান তার অনুসারীদের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে বলেছেন, যা সরাসরি নিরাপত্তার ওপর আঘাত।
“যে কেউ সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করবে, সেনাবাহিনীও তার জবাব দেবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের বাহিনী নয়, এটি কেবল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান,” যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে নরম হতে পারে না এবং ‘খারেজি’ জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে ইমরান খানের পক্ষ থেকে ‘জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনার’ ইঙ্গিতকে তিনি ‘রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান’ বলে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যমকে ‘তথ্যভিত্তিক’ সংবাদ পরিবেশন এবং ‘মিথ্যা প্রচারে পা না দেওয়ার’ আহ্বান জানান জেনারেল চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্যনিরাপত্তা, জনসংখ্যা সংকট- এসব প্রকৃত সমস্যা নিয়ে বেশি আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।



