ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক চান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। ফাইল ছবি।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। ফাইল ছবি।

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানে যে কয়জনের এখন সবচেয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকার কথা, স্বাভাবিকভাবেই তাদের একজন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ।

কারণ ২৪ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের ‍গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধংদেহি মনোভাব দেখা যাচ্ছে।

পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক নানা পদক্ষেপ ও কথার লড়াই মাঠেও গড়াচ্ছে। এরই মধ্যে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে গুলি বিনিময়ও হয়েছে।

এতে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো দেখাচ্ছে, কার বাহুতে কত বল, কার পাশে কে থাকছে।

প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে যুদ্ধযুদ্ধভাবের মধ্যেই গত আগস্টের পর বাংলাদেশের সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক হচ্ছে, তা আরও গভীর করার বার্তা দিলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।

ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এই বার্তা দেন বলে পাকিস্তানের সংবাদপত্র দ্য নিউজ জানিয়েছে; খবরটি জিও টিভিও প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দূতাবাস আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ছিলেন প্রধান অতিথি।

২৫ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান গণহত্যায় নামলে বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে নিয়েছিল; সেই লড়াইয়ে বাঙালির পাশে ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত।

তারপর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ ২০১০ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে সম্পর্ক অবনতির দিকে গড়াতে থাকে।

বিশেষ করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এলে তার জেরে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে।

কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর চিত্র যায় বদলে।

এতদিন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নাজুক হওয়ার সঙ্গে পাকিস্তানমুখী হতে শুরু করে বাংলাদেশ।

সেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে ২২ এপ্রিল পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর। তার তিন দিন বাদে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা চাইলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আমরা গুরুত্ব দিই এবং এই সম্পর্ক আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত করে তা আরও গভীর করতে চাই।”

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি সহজ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস দুই বার বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে। তারা মূলত দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর কথা বললেও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্পর্কের আওতা আরও বাড়ানোর কথা বললেন, যদিও ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করেননি তিনি।

খাজা আসিফ সমঝোতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর কথা বলেন।

এই অনুষ্ঠানে পাকিস্তান সরকারের আরও একজন মন্ত্রীসহ কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীরা আমন্ত্রিত ছিল। পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ইকবাল হোসেন খান নানা খাবারের পাশাপাশি রসগোল্লা ও ভেটকি মাছ দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়িত করেন বলে জিও নিউজ জানিয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যখন নাজুক, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পূর্ব সীমান্তের দিকেও নজর রাখছে ভারত। পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আকাশে দুটি রাফাল যুদ্ধবিমানের উড্ডয়ন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

ইসলামাবাদ অস্বীকার করে গেলেও নয়া দিল্লি মনে করছে, পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে পাকিস্তান রয়েছে। আর এখন পাকিস্তানের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব, তাতে বাংলাদেশ ও চীন ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে নয়া দিল্লিতে।

গত মাসে চীন সফরের সময় ভারতের স্পর্শকাতর অংশ চিকেন নেক নিয়ে ইউনূসের এক মন্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি নয়া দিল্লি। দেশটির সংবাদপত্রগুলোও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনায় মুখর।

এখন তাতে যুক্ত হয়েছে পহেলগামে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে বাংলাদেশের সময় নেয়া।

কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, “গত মঙ্গলবার জঙ্গিদের হত্যালীলার কথা প্রকাশ্যে আসার পর পরই আমেরিকা থেকে শুরু করে ব্রিটেন, রাশিয়া, চিনের মতো দেশগুলা হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিল। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেও অনেকে মুখ খুলেছিল মঙ্গলবারেই।

“কিন্তু বাংলাদেশের তরফে কোনো বিবৃতি আসেনি মঙ্গলবার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল।”

ভারতের সংবাদমাধ্যমে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, ইউনূস সরকারের পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতাই এর কারণ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads