পাসপোর্ট জালিয়াতি ও ভুয়া বিয়ের দায়ে নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশির ‘রেকর্ড’ সাজা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

ভুয়া পরিচয় দেখিয়ে নাগরিকত্ব নেওয়ায় এক বাংলাদেশিকে নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে দীর্ঘতম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত “জাহাঙ্গীর আলম” নাম নিয়ে নিউ জিল্যান্ডে বসবাসরত ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম বা পরিচয় উদঘাটন করতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে ২৯টি অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে মিথ্যা পরিচয়ে নিজের স্ত্রী ও মায়ের জন্য ভিসার আবেদনের মতো অপরাধও রয়েছে।

শুক্রবার অকল্যান্ড জেলা আদালতে তাকে জাল নথি তৈরি, মিথ্যা তথ্য সরবরাহ এবং জাল পাসপোর্ট ব্যবহারের জন্য চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা দেশটির ইতিহাসে এ ধরনের অপরাধে দেওয়া সর্বোচ্চ কারাদণ্ড।

বিচারক পিটার উইন্টার দুই দশক ধরে চলা এই জালিয়াতির তীব্র সমালোচনা করেন।

রায়ে তিনি বলেন, “প্রাথমিক পরিচয় থেকে শুরু করে জালিয়াতির মাত্রা ক্রমাগত বেড়েছে। এটি ছিল জটিল, পূর্বপরিকল্পিত এবং দীর্ঘস্থায়ী জালিয়াতি। অপরাধের সময়কাল ও ব্যপ্তী ছিল উল্লেখযোগ্য।”

জাহাঙ্গীর আলমের ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী তাজ পারভিন শিল্পীকে ১২ মাসের জন্য ঘরবন্দি থাকার সাজা দেওয়া হয়েছে।

শাস্তির কারণ হিসেবে আদালত বলেছে, শিল্পী এই জালিয়াতি সম্পর্কে “সম্পূর্ণ অবগত” ছিলেন। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাইবোন এবং একই গ্রামে বেড়ে ওঠেছিলেন।

এই দম্পতির ২১ বছর বয়সী ছেলেকে নির্দোষ হিসেবে রায় দিয়েছে আদালত।

২০০৮ সালে মায়ের সঙ্গে যখন সে নিউ জিল্যান্ডে আসে তখন তার বয়স ছিল মাত্র চার বছর। পরবর্তিতে সে নিউ জিল্যান্ডের নাগরিকত্ব পায়।

জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ নিউজিল্যান্ড ইনকরপোরেশনের (বিএএনজেডআই) সভাপতি ছিলেন।

ওই দায়িত্ব পালনের সময় তিনি কমপক্ষে ৮০ জন বাংলাদেশিকে পাসপোর্টের আবেদনে সহায়তা করেছিলেন; তাছাড়া বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনও তাকে পাশে পায়- এমন তথ্য জানিয়ে তার সাজা কমানোর আবেদন করা হলেও বিচারক তা আমলে নেননি।

বিচারক বলেন, অবৈধভাবে বসবাসরত এবং বাঙালি সম্প্রদায়ে যার সম্মান আছে, এমন একজন ব্যক্তির অন্যের পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করাটাও এক ধরনের ঔদ্ধত্য।

নিউ জিল্যান্ডের ওয়ান নিউজের খবরে বলা হয়, আলমের বয়স এবং আসল পরিচয় অজানা রয়ে গেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে তার বয়স ৫০ এবং তার ছোট ভাই “জন আলম” যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।

ছোট ভাইয়ের পরিচয় নিয়ে তিনি নিউ জিল্যান্ডে এলেও কীভাবে সেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন তা স্পষ্ট নয়।

নিউ জিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯০ এর দশকে জাপানে ছিলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরে অকল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।

অকল্যান্ডে ট্যাক্সি চালক হিসেবে জীবিকা শুরুর পর নিউ জিল্যান্ডের একজন নারীর সঙ্গে ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’ করে স্থায়ী হয়েছিলেন তিনি।

আদালত বলেছে, এই বছরের শুরুতে জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছিলেন জীবনযাত্রার পার্থক্যের কারণে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। তবে তা জুরি বোর্ডের সদস্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

নাগরিকত্ব লাভ, শিল্পীকে বিয়ে এবং সন্তানের বাবা হওয়ার পরও জালিয়াতির চক্র থেকে জাহাঙ্গীর বের হতে পারেননি বলেই আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিচারক বলেন, স্বামী ও স্ত্রীর তথ্যে গড়মিল পেয়ে তার স্ত্রীর ভিসার আবেদন শুরুতে নাকচ করা হয়েছিল। কয়েকবার আবেদনের পর ২০০৮ সালে অস্থায়ী ভিসায় তার স্ত্রী নিউ জিল্যান্ডে আসেন। তবে স্বাস্থ্যগত ত্রুটির কারণে তাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জাহাঙ্গীর আলম তার মায়ের জন্য ‘ভিজিটর ভিসার’ চেষ্টা করলে সেটিও প্রত্যাখ্যান করা হয়।

আদালত বলেছে, “জাহাঙ্গীরের পরিচয় সম্পর্কে শিল্পী শুরু থেকেই অবগত ছিলেন। তাছাড়া জুরি বোর্ড তার এই বক্তব্য বিশ্বাস করেনি যে, নিউ জিল্যান্ডে জাহাঙ্গীরের প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আগে শিল্পীর সঙ্গে তার দেখা হয়নি।”

এই যুগান্তকারী রায়কে স্বাগত জানিয়েছে অভিবাসন নিউ জিল্যান্ড। তারা বলেছে, এই মামলার তদন্ত ছিল বেশ জটিল, যা শেষ করতে তাদের ছয় বছর সময় লেগেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads