চারদিনের ব্যবধানে বদলে গেল চিত্র। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীদের স্বস্তি দিতে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। নির্বিঘ্নে আন্দোলন পরিচালনার জন্য বিতরণ করা হয়েছিল খাবার ও পানি। অবশ্য এবার দেখা গেল ঠিক উল্টো চিত্র।
বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যমুনা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচিতে শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদেরও লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। নিক্ষেপ করা হয়েছে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, যাতে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশ সব সময় সরকারের ‘পেটুয়া বাহিনী’ ছিল, এখনও আছে।
আবাসন ভাতা, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে এই লংমার্চ শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে ১২টার পর কাকরাইল মসজিদের সামনে লংমার্চে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।
আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে তারা মৎস্য ভবন মোড়ের দিকে চলে যান।
লংমার্চে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন। এ ছাড়া ঢাকা ট্রিবিউনের জবি প্রতিনিধি সোহান ফরাজি, দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসানও আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে সাংবাদিক মাহতাব লিমন, মেহেদীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করবো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, “আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া হবে না।”

পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের সামনে বসে পড়েন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, কয়েকদিন আগে যমুনার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ হলো, গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে টানা আন্দোলন চললো তখন পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো পুলিশের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছে, খাবার দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের যাতে গরম না লাগে সেজন্য ঠাণ্ডা পানির বাষ্প ছিটানো হয়েছে। অথচ আমাদের ন্যায্য দাবির জন্য যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোরন করছি, তখন পুলিশ হামলা চালিয়েছে।
তারা আরও বলেন, মেয়েদের মাথায় টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে, লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এক দেশে দুই আইন চলতে পারেনা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:
জবি শিক্ষার্থীদের লংমার্চে লাঠিপেটা-টিয়ারশেল নিক্ষেপ, অর্ধ শতাধিক আহত